Pages

Sunday, 25 August 2019

"যে বিন্দুতে এক হতে পারে প্রকৃত নাস্তিক ও প্রকৃত আস্তিক"!পড়ুন,জানুন অন্যকে জানান!

"যে বিন্দুতে এক হতে পারে প্রকৃত নাস্তিক ও প্রকৃত আস্তিক"!পড়ুন,জানুন অন্যকে জানান!
*********************???**********************
সংগ্রহেঃ এম ডি আলী

বিশ্বাসের ওপর জোর চলে না এ কথা দিবালোকের ন্যায় সত্য। কাউকে জোর করে বিশ্বাসী বানানো যতটা কঠিন, কাউকে অবিশ্বাসী বানানোও সমান কঠিন। এ বোধ সবার থাকতে হবে। প্রাকৃতিক এই সত্যকে অমান্য করে যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি নিজের খেয়াল খুশির প্রয়োগ ঘটাতে চাইবে সে শুধু নিজের বিপদই ডেকে আনবে না, সমাজকেও ঘোর দুর্দশায় নিপতিত করবে, যেমন আজ করছে। আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে আজ যেন সকলের এক ‘রা’- প্রতিপক্ষের অস্তিত্ব মানি না, মানবো না। কেউ উন্মত্ত চাপাতি হাতে, কেউ নীতি-নৈতিকতাহীন কলমের তীব্র আঘাতে, যার যার সামর্থ্য মোতাবেক ক্ষত-বিক্ষত করে চলেছে প্রতিপক্ষের শরীর, মন, আবেগ-অনুভূতিকে। উগ্রতার জবাবে উগ্রতা, তার জবাবে আরও বেশি উগ্রতা- এভাবেই সমাধানকে পাশ কাটিয়ে সঙ্কটকে তীব্র থেকে তীব্রতর করা হচ্ছে।

নাস্তিকতা ও আস্তিকতার সংজ্ঞা নিয়ে কোনো তত্ত্বগত আলোচনায় আমি যাব না, এ বিষয়ে আলোচনা, বিশ্লেষণ, যুক্তি-প্রতিযুক্তির অভাব নেই। বলা চলে রাজনীতিক ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলে এই আস্তিক-নাস্তিক ইস্যু চালু হবার পর থেকেই ও বিষয়ে গবেষণা চলছে। শুধু এক নাস্তিকতাকেই যে কতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় তা সচেতন মানুষমাত্রই জানেন। আমার এই লেখাটি বাংলাদেশ নিয়ে; সেই সুবাদে বাংলাদেশের আস্তিকতা ও নাস্তিকতার মাঝে বিরাজিত প্রবল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর উপায় খোঁজার চেষ্টা থাকবে এই লেখায়। সব শেষে চেষ্টা করব প্রকৃত আস্তিক ও প্রকৃত নাস্তিককে অভিন্ন লক্ষ্য ও আদর্শের বন্ধনে আবদ্ধ করতে।

প্রথমেই জেনে নেয়া যাক আমাদের দেশের নাস্তিকদের স্বরূপ কেমন, এবং অবশ্যই তা বাস্তবতার আলোকে। বাংলাদেশের নাস্তিকদের আমি তিন ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত, এক শ্রেণির নাস্তিক আছে যারা নিজেদের পরিচয় দেয় নাস্তিক হিসেবে, কিন্তু কার্যত তারা না আস্তিক, না নাস্তিক। এদের ধর্ম হলো ‘হিপোক্রিসি’। এরা নিজেদের নাস্তিক পরিচয় দেয় শুধুমাত্র বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের ভয়ে। প্রেসটিসের কথা ভেবে। যেহেতু আধুনিকতার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে নাস্তিকতা, তাই তারা নাস্তিকতার সিঁড়ি বেয়ে আধুনিকতার চরম শিখরে আরোহন করতে সচেষ্ট। এদের মতো হিপোক্রেট, যারা নিছক নিজেকে আধুনিক প্রমাণ করার জন্য ফেসবুক বা ব্লগের ধর্ম ক্যাটাগরিতে ‘এথিজম’ লিখেন বা ‘মানবতা’ লিখেন, তারা আসলে যে কী, সে সম্বন্ধে হয়তো নিজেরাই সন্দিহান থাকেন। আজ বাদে কাল যদি আস্তিকতার পালে হাওয়া লাগে এবং এরা টুপি পরে মসজিদ-মাদ্রাসায় দৌড়ায় তাহলে অবাক হবার কিছু নেই। এদেরকে অনেকে ‘নিউ এথিস্ট’ও বলে থাকে।

দ্বিতীয়ত, নাস্তিক বলা হয় এমন আরেকটি দল আছে যারা অনেকাংশে উপরোক্ত শ্রেণিটির মতোই, তবে পার্থক্য হলো, এরা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিজেদের নাস্তিকতাকে প্রচার করতে পছন্দ করে; এবং তা করতে গিয়ে এমন কদর্যতার আশ্রয় নেয়, যা মানবজাতির ইতিহাসে অতীতে খুব কমই ঘটেছে। দিনের আলো প্রকাশ হলে রাতের অন্ধকার এমনতিতেই কেটে যায়, এ সত্য এরা জানে তবে মানে না। যদি মানতো তাহলে নিজেদের আদর্শকে সুষ্ঠুভাবে প্রচার করাকেই বেশি গুরুত্ব দিতো, নির্দিষ্ট ধর্মের নবী, অনুসারী, ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় স্থাপনা নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি বা অশ্লীল কমেন্ট করতো না। এমন কোনো কাজ করত না যাতে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে আঘাত লাগে। অতি সম্প্রতি এদেরই একজনকে দেখা গেছে মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রাণপ্রিয় ক্বাবাঘরকে অবমাননা করতে। মানসিকতার কী নিদারুন বিকৃতি! এসবের বিরুদ্ধে কম-বেশি সমালোচনাও হয়। আস্তিকদের পাশাপাশি কখনো কখনো এসব সমালোচনায় কিছু নাস্তিককেও অংশ নিতে দেখা গেছে। যেমন দিন কয়েক পূর্বে ক্বাবাঘরকে অবমাননা করার সমালোচনা করতে গিয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ মুক্তমনায় জনৈক নাস্তিক লিখলেন যে,

“বাংলাদেশে ধর্মান্ধদের দেশ এটা সবাই জানে। ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষগুলো ধর্ম পালন করুক বা না করুক ধর্মের প্রতি এক ধরনের উগ্রতা তারা লালন করে থাকে। এখন কথা হচ্ছে এই উগ্রতা বা ধর্মান্ধতা কীভাবে দূর করা যাবে? কীভাবে আমরা সমাজটাকে ধর্মান্ধতা মুক্ত করতে পারি?
ক) ধার্মিকদের গালাগালি করে?
খ) ধার্মিকদের পবিত্র জিনিসগুলোকে অশ্রদ্ধা করে?
গ) ধার্মিকদের সাথে মিশে এবং যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে সবকিছু বোঝানোর মাধ্যমে?
ঘ) শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার ও বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে?”

তার উত্থাপিত এই প্রশ্নগুলোই নাস্তিক সেজে থাকা কট্টর ধর্মবিদ্বেষী হিপোক্রেটদের ভ্রান্ততা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তাদের কাছে আছে কি? যার স্বপক্ষে শক্তিশালী যুক্তি-প্রমাণ আছে, সে কোন কারণে প্রতিপক্ষের মোকাবেলা করতে গিয়ে গালাগালি করবে? তার তো উচিত যথাসম্ভব ধার্মিকদের সাথে মিশে এবং যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানো। কিন্তু তা না করে তারা যে বক্রপথ অবলম্বন করছে সেটা তাদের দুর্বলতাই প্রমাণ করে।

সুতরাং বোঝা গেল উপরোক্ত শ্রেণিদু’টি আদর্শিক ও কর্মপদ্ধতি উভয়দিক দিয়েই প্রকৃত নাস্তিকের মধ্যে পড়ে না। তৃতীয় শ্রেণিটিই মূলত নাস্তিকতার চর্চা করতে চেষ্টা করেন যুক্তির কষ্ঠিপাথরে যাচাই-বাছাই করে। যদি সংখ্যার হিসাব করা হয়, তাহলে আগের দুই শ্রেণির অনুপাতে এদের সংখ্যা খুবই কম। এই শ্রেণিটি কম-বেশি সব সময়ই ছিল, কিন্তু বর্তমানে যে কারণে নাস্তিকতা বিতর্কিত হচ্ছে এবং দেশের রাজনীতি ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী নাস্তিক নামধারী আগের দুই শ্রেণি, যারা আসলে কোনো আদর্শেরই ধারক নয়, আদর্শ ও নীতিহীনতাই যাদের ধর্ম। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে, কিংবা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ধর্মবিদ্বেষ ছড়িয়ে তারা নিজেরা যদিও নিরাপদেই থাকছে, তবে ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে সেই সব বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী ধ্যান-ধারণার মানুষগুলো, যারা মাঠ লেবেলে কাজ করেন। কাজেই এদের সম্পর্কে যদি প্রকৃত নাস্তিকরা এখনই সজাগ না হন, প্রতিহত না করেন, কমপক্ষে নিয়ন্ত্রণ করতেও সচেষ্ট না হন তাহলে শেষ বিচারে নাস্তিকতাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাতে সন্দেহ নেই। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে কিন্তু ইতোমধ্যেই নাস্তিকতা বহু অখ্যাতি কুড়িয়েছে, এবং অবশ্যই তা নাস্তিকতার কারণে নয়, উগ্র ধর্মবিদ্বেষের কারণে।

বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বহু পুরনো যে, এখানকার মানুষ ধর্মান্ধ। অভিযোগটি উড়িয়ে দেবার মতো নয়। এ দেশের ধর্মভীরু মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে বারবার ভুল পথে প্রবাহিত করা হয়েছে এটা ইতিহাস। যে ধর্মবিশ্বাস হতে পারত জাতির উন্নতি, প্রগতি ও সমৃদ্ধির পাথেয়, দেখা গেছে সেটা জাতির অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ তাদের ধর্মবিশ্বাসকে ব্যবহার করছে আর্থিক স্বার্থোদ্ধারে, কেউ রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে, কেউ জঙ্গিবাদের জ্বালানি হিসেবে। সবক্ষেত্রেই সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রতারিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ধর্মব্যবসায়ী স্বার্থপুজারী শ্রেণির স্বার্থে কেউ আঘাত করলেই তারা সাধারণ মানুষকে তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে দেয় যে, অমুক নাস্তিক, অমুক কাফের, অমুক মুরতাদ, অমুককে কতল করা ফরদ, অমুক দলকে ভোট দেয়া হারাম ইত্যাদি ইত্যাদি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষ বারবার তাদের বিশ্বাস করে এবং প্রতারিত হয়। বছরের পর বছর এমনটাই হয়ে আসছে। এমতাবস্থায় এক শ্রেণির ইসলামবিদ্বেষী, ফেতনাবাজ ও নৈরাজ্যবাদী লোক নিজেকে নাস্তিক পরিচয় দিয়ে যখন আল্লাহ, আল্লাহর রসুল, ধর্মগ্রন্থ, ধর্মীয় স্থাপনা ইত্যাদি নিয়ে করুচিপূর্ণ মন্তব্য করে, ধর্মবিশ্বাসী মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তখন ধর্মব্যবসায়ী, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতিকারী ও জঙ্গিবাদীদের হাতে বিরাট এক অস্ত্র এসে যায়। তারা কথিত নাস্তিকদের এই ক্রিয়াকলাপকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে নিজেদের অভিসন্ধি পূরণে প্রবৃত্ত হয়। সাধারণ মানুষকে অহেতুক উত্তেজিত করে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে। ফল হয়েছে এই যে, চূড়ান্তভাবে ইসলামকেই হেয় করার সুযোগ বেড়েছে। বলা হচ্ছে- ইসলাম ও মুসলিম জাতি ভিন্নমত সহ্য করে না, ভিন্নমতের মানুষকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়, ইসলামে চিন্তার স্বাধীনতা নেই, বিশ্বাসের স্বাধীনতা নেই, ওরা যুক্তি বোঝে না, ওরা বোঝে শুধু চাপাতি! আসলেই কি তাই?

আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশ হচ্ছে- দীনের ব্যাপারে কোনো জোর জবরদস্তি নেই, সত্য থেকে মিথ্যা পৃথক হয়ে গেছে (বাকারা ২৫৬)। আর ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে রসুলাল্লাহর কঠোর নিষেধবাণী রয়েছে। শরীর ও আত্মার সমন্বয়ে মানুষ। জোর করে শরীরকে হয়তো কোনো কাজে বাধ্য করা সম্ভব, কিন্তু কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার উপর নির্দিষ্ট বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ অপ্রাকৃতিক। প্রকৃতপক্ষে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে নাস্তিক হবার কারণে ইসলামে কোনো শাস্তিমূলক বিধান নেই। ইসলামে শাস্তির বিধান আছে সমাজে বিশৃঙ্খলা, গোলযোগ, এক কথায় অশান্তি সৃষ্টি করলে। যে কেউ এমন গর্হিত কাজ করবে, সে মুসলিম হোক, হিন্দু হোক, খ্রিস্টান হোক বা নাস্তিক হোক, তার ওই কাজ ইসলামী আইন বা মানুষের বানানো আইন উভয়ক্ষেত্রেই অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য এবং তার শাস্তিও অনিবার্য। এই শাস্তি এই কারণে নয় যে, সে মুসলিম বা সে হিন্দু বা সে নাস্তিক, সে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করেছে এটাই তার অপরাধ।

নাস্তিকতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি যে সহনশীল তার প্রমাণ পবিত্র কোর’আন। কোর’আনে বহু আয়াত রয়েছে যেখানে আল্লাহ তাঁর অস্তিত্ব, একত্ব ও শক্তিমত্তার পক্ষে অকাট্য যুক্তি তুলে ধরেছেন। মানবজাতির মধ্যে যারা তাঁকে অস্বীকার করতে চাইবে, যারা বলবে যে, কোর’আন আল্লাহর রচনা নয় তাদের প্রতি তিনি রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, আর আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তা সম্পর্কে তোমাদের যদি কোন সন্দেহ থাকে, তাহলে এর মত একটি সুরা রচনা করে নিয়ে আস। এক আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাহায্যকারীদেরও সাথে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক (সুরা বাক্বারা ২৩)। অন্যত্র বলেছেন, তারা কি কোর’আন নিয়ে গবেষণা করে না? এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে আসত তাহলে তারা অবশ্যই অনেক বৈপরিত্য দেখতে পেত (নিসা ৮২)। অর্থাৎ আল্লাহ নাস্তিকতার জবাব দিচ্ছেন যুক্তি দিয়ে, প্রমাণ দিয়ে, বুঝিয়ে। মানুষ তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, এটা আল্লাহর দৃষ্টিতে অস্বাভাবিক কিছু নয়। বরং তিনি যেন এটাই চান যে, সত্যান্বেষী মানুষ তাঁকে নিয়ে, তাঁর সৃষ্টি নিয়ে ও প্রেরিত ধর্মগ্রন্থ নিয়ে গবেষণা করুক। তাই কখনো আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের আবর্তনের মধ্যে তাঁর নির্দশনকে অনুধাবন করার জন্য জ্ঞানীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন (আল ইমরান ১৯০), আবার কখনো নিজের একক কর্তৃত্বের পক্ষে অকাট্য যুক্তি তুলে ধরছেন যে, যদি আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য ইলাহ থাকতো, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেতো। অতএব আরশের অধিপতি আল্লাহ সেসব বিষয় থেকে পবিত্র যা তারা বলে থাকে (আম্বিয়া ২২)। অর্থাৎ আল্লাহ কারও বিশ্বাসের উপর বা অবিশ্বাসের উপর শক্তির পরিবর্তে যুক্তির প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন, যা প্রাকৃতিক ও বিজ্ঞানসম্মত। সুতরাং নাস্তিকতার বিরুদ্ধে সহিংসতা পরিহার করে ধর্মবিশ্বাসীদের উচিত হবে উপযুক্ত যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে নাস্তিকতাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করা।

আশার কথা হলো, নাস্তিক মানেই যেমন ধর্মবিদ্বেষী নয়, আস্তিক মানেও তেমন ধর্মান্ধ নয়। নাস্তিকদের মধ্যে অনেকেই প্রকৃত নাস্তিকতা চর্চা করেন তাতে সন্দেহ নেই। তারা বর্তমানে উগ্র ধর্মবিদ্বেষীদের প্রকাশ্য সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এজন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। একইভাবে আস্তিকদের মধ্যেও যারা ধর্মান্ধতামুক্ত যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ রয়েছেন, যারা জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে সঠিক পথে প্রবাহিত করতে আগ্রহী তাদেরকেও যথাযথ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। যে করেই হোক, জাতিকে ধর্মব্যবসায়ী স্বার্থান্ধদের পেছন থেকে সরাতে হবে। নতুবা এই ধর্মবিশ্বাসই দেশ, জাতি ও মানবতার মহাশত্র“তে পরিণত হতে পারে। নাস্তিকতা মানে যদি সমাজকে ধর্মান্ধতা বা ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্ত করার সংগ্রাম হয়, এবং আস্তিকতা মানে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে মানবজীবনে ন্যায়, সমৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াই হয় তাহলে আস্তিক-নাস্তিক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে বাধা কীসের?

উপসংহারঃ
আস্তিকের সাথে নাস্তিকের দ্বন্দ্ব -- সংখ্যার বিচারে অন্তঃত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি অতি অসম দ্বন্দ্ব! কিন্তু দর্শনগতভাবে একটি অপরটির প্রবল প্রতিপক্ষ। আসলে নাস্তিকতা ধর্মকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম নয়, সেটাই আমার ধারণা। চ্যালেঞ্জটা করে বস্তুবাদ। নাস্তিকতাও একটি বস্তুবাদ, কিন্তু শুধু নাস্তিকতা, আস্তিকতায় খুব কম ইম্প্যাক্ট করে। অনেক মানুষ ধর্মকে দূরে ঠেলে দিতে চাইলেও একেবারে ত্যাগ করতে পারে না। আর নাস্তিকতা সেই দূরত্ব তৈরী করে না, করে বস্তুবাদ। মানুষ বস্তুবাদ এবং বস্তুবাদী জিনিষের প্রতি সহজেই ঝুকে যায়, আর দূরত্বটা সেখানেই তৈরী হয়। বস্তুবাদীতায় যতই মগ্ন হোক না কেন, মরণের ভয়, সামাজিকতা ইত্যাদি কারণে ধর্মকে সাইডলাইন থেকে কখনো একটু আধটু সামনে নিয়ে আসে। উপরের কথাগুলো সবার জন্য নয়, তবে বেশীরভাগ মানুষের জন্য।ত্রুটি মার্জনীয়, ধন্যবাদ সবাইকে)

==============================
- 'যে জিনিসটার অস্তিত্বই নেই, তাতে সময় দেওয়ার কোন মানে আছে? সময় দিবেন এমন কিছুর পেছনে যা অস্তিত্বশীল। স্রষ্টার অস্তিত্বই নেই, তাই ইবাদাতের নামে কল্পিত জিনিসের পেছনে সময় নষ্ট না করে জীবনকে উপভোগ করুন'।
- 'ও আচ্ছা। তা আপনি এখানে কী করছেন তাহলে?'
- 'আমি বলতে চাচ্ছি, স্রষ্টার অস্তিত্বই নেই। তাই তার পেছনে সময় না দিয়ে জীবন উপভোগ করতে।'
- 'স্রষ্টার যদি অস্তিত্বই না থাকে, তাহলে আপনি এই গ্রুপে সময় দিচ্ছেন কেনো?'
- 'না, আমি বলতে চাচ্ছি.......'
- 'আপনি বলতে চাচ্ছেন যে, আপনারা কেবল অস্তিত্বশীল জিনিসের পেছনে সময় দিয়ে আপনাদের জীবন উপভোগ করেন, রাইট?'
- 'একদম ঠিক বলেছেন'।
- 'আপনারা ব্লগে, নাস্তিক্যবাদী গ্রুপে সারাদিন 'স্রষ্টা' তর্কে মগ্ন থাকেন। আপনারা এমন জিনিসে সময় দেন, যা অস্তিত্বশীল। সুতরাং আপনাদের সমীকরণ অনুযায়ী 'স্রষ্টা' আলটিমেটলি অস্তিত্বশীল। '
- 'না ভাই, আসলে..... ইয়ে........'

===========================================

কিছু কিছু খবর আশা সত্যিই আশা জাগানিয়া। কবি মুহিব খাঁন বলেছিলেন–

”যত হোক আধুনিক আসবে দুনিয়া ঠিক দাড়ি-টুপিওয়ালাদের দখলে।”


”মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আমেরিকা ও ইউরোপ উদ্বিগ্ন

আমেরিকায় ৩০ বছরের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা ইহুদিদের ছাড়িয়ে যাবে বলে গত শতাব্দির শেষের দিকে আশংকা করা হয়েছিল। আঠারো বছর আগে আমেরিকার ম্যাস্সাচুসেট্স বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সিম্পোজিয়ামে এই ইঙ্গিত দেয়া হয়।

টাইম ম্যাগাজিনের ওই লেখায় এটাও জানানো হয় যে স্থানীয়ভাবে মুসলমানদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলমানদের প্রতি ধর্মীয় সহনশীলতাও বাড়ছে। যেমন মিশিগান রাজ্যের ডিয়ারবোর্নে মোট অধিবাসীদে ১০% থেকে ১৫% আরবীয়। এখানকার পাবলিক স্ক’ল সমূহে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং ক্যাফেটারিয়ায় শুকরের মাংস পরিবেশন বন্ধ করা হয়েছে। মুসলীম ছাত্রীরা আলাদা ক্লাসে সাতার শিখতে পারে ও জিমনেসিয়ামে পা সমান লম্বা স্লাক্স পরতে পারে।

টাইম পত্রিকায় এটাও ইঙ্গিত করা হয়েছিল যে আমেরিকাতে ইসলাম বিভেদমুক্ত নয়। বিভিন্ন বিভক্তির ফলে আমেরিকান ইসলাম নিদারুণভাবে দূর্বল। মিসরীয়রা, লেবানিজরা যার যার মত আলাদাভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদী পালন করে। কোথাও কোথাও একই ভবনে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় জামাত হয় এবং কোন সম্মিলিত কার্যক্রম নেই। এ দেশে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী কোন ইসলামী আন্দোলন নেই বলে জানিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টির ইসলামিক সোসাইটির পরিচালক মুজাম্মিল সিদ্দিকী। আমেরিকান মুসলমানরা ইসলাম বহির্ভূত রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলতেও পারছেন না। এ নিয়ে পিতামাতা ও সন্তানদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে বিরোধ।

একটি গবেষণার ফলাফলের উপর ১৯৮৮ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত ওই সিম্পোজিয়ামে আমেরিকান মুসলমানদের সংখ্যা নিরুপণ করা হয়েছিল ৪৬,৪৪,০০০। ওই সময় আমেরিকায় ৬০০ টি ইসলামিক সেন্টার ছিল। তৈরী হচ্ছিল বিশাল আকৃতির নতুন নতুন মসজিদ ও ইসলামিক বিদ্যালয়। গবেষণার উদ্বৃত দিয়ে বলা হয় যে খ্রীষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা এবং নতুন মুসলমান অভিবাসীদের আগমন ও এদের মধ্যে উচ্চ জন্ম হারের ফলে মুসলমানদের সংখ্যা ইহুদিদের ছাড়িয়ে যাবে এবং খ্রীষ্টানদের পরে মুসলমানরা হবে আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায় ।

এ প্রসঙ্গে আমেরিকার বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক টাইম পত্রিকায় ১৯৮৮ সালের মে মাসের ২৩ তারিখে প্রকাশিত সংখ্যায় ‘আমেরিকান ফেসিং টোয়ার্ড মেক্কা’ (আমেরিকানরা মক্কার দিকে ফিরছে) শীর্ষক দুই পৃষ্ঠা ব্যপি একটি লেখায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির কিছু কারণ তুলে ধরা হয়। ওগেন ডেভিস নামক কালোবর্ণের খ্রীষ্টান ধর্মের একজন আমেরিকানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয় যে তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকে চার্চে যাচ্ছেন। অথচ তিনি দারুণ সমস্যায় পড়েন যখন দেখেন কিভাবে ভালো খ্রীস্টান হয়েও একজন আমেরিকান অসম সমাজ ও বর্ণ জগতকে সহ্য করছেন। কোন প্রতিবাদ করেন না। তার মতে খ্রীস্ট ধর্ম কালোদের জন্য নয়। ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসকারী কামোনেহ নামের অপর একজন আমেরিকান বলেন যে গীর্জার একজন অত্যন্ত ধার্মিক সদস্য তাকে লালন পালন করেছেন।

ফলে খ্রীষ্টান ধর্মের সবকিছুই তিনি আমল করেছেন। তারপরেও এ ধর্মের তাৎপর্য বুঝতে পরেননি; বিভিন্ন দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত অভাব উপলদ্ধি করেছেন। ওং চুয়ান নামের একজন চায়নিজ আমেরিকান ধার্মিক, পবিত্র ও সফল একটি জীবন চান। ওগেন ডেভিস, কামোনেহ এবং ওং চুয়ান এই তিনজনের সবাই উত্তর খুজে পেয়েছেন ইসলামে। এ ধরণের পছন্দ সাম্প্রতিককাল অবধি বিচিত্র বা অদ্ভুত বলে মনে করা হতো।

সারা পৃথিবীতে ওই সময়ে ৮০ কোটি ইসলাম ধর্মের অনুসারী থাকা সত্বেও আমেরিকায় ইসলাম ধর্ম ও কোরান অদৃশ্য ছিলো। অধিকন্ত, ইসলাম ধর্ম ছিলো অবজ্ঞার বিষয়। সকলে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করত। ঐতিহ্যগতভাবে পশ্চিমা দেশসমূহে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে খারাপ ধারণা রয়েছে। উক্ত লেখায় ইউএস মসজিদ পরিষদের সভাপতি দাউদ আসাদের উদ্বৃত দিয়ে বলা হয় যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানে বিপ্লব এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আমেরিকায় ইসলামের প্রতি বিরুপ ধারণা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসাধারণ মুসলমানদের টেরোরিস্ট (সন্ত্রাসী) বলে ডাকে।

টাইম পত্রিকায় ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ওই লেখায় প্রকাশিত হয়েছিল যে ইসলাম ধর্মে দিক্ষীত আমেরিকানদের সংখ্যা ক্ষীণ গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে আসছে অজস্র মুসলমান অভিবাসী। এই দুয়ে মিলে তৈরী হচ্ছে বড়োসড়ো আমেরিকান ইসলামী কমিউনিটি। বিগত দুই দশকে আমেরিকাতে ঢোকা মুসলমানদের সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে মোট অভিবাসীদের ১৪% পৌছেছে। সেই সাথে রয়েছে কালোবর্ণের মুসলমানরা। এদের নেতা এলিজাহ মুহাম্মাদ স্থানীয় সামাজিক রীতিনীতি ও সাদা আমেরিকান বিরোধী বলে উল্লেখ করা হয়। এই দলের আদর্শকে প্রধান ইসলামী দল স্বীকৃত দিয়েছে বলে টাইম পত্রিকায় অভিযোগ করা হয়।

টাইম ম্যাগাজিন জানায় যে ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরেও মুসলমানরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাচ্ছে। যেমন লস্ এ্যাঞ্জেলেস মুসলমানরা ভোটার রেজিস্ট্রেশনের জন্য সচেষ্ট। এখানে রয়েছে মুসলিম পলিটিকাল এ্যাকশন কমিটি। এই কমিটির উদ্দেশ্য হলো আমেরিকান মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, প্যালেস্টিনিয়ানদের সহায়তা করা এবং ইউএস কংগ্রেসে মুসলিম প্রতিনিধি নির্বাচন করা। মুসলিম পলিটিকাল এ্যাকশন কমিটির ইরাকে জন্মগ্রহণকারী মুসলিম মুখপাত্রের উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয় যে “মুসলমানরা চাচ্ছে জনসাধারণ এখন থেকে আমেরিকায় ইহুদি-খ্রীষ্টান-মুসলমান সমাজ হিসেবে ভাবতে শুরু করুক “। লস্ এ্যাঞ্জেলেস ইসলামিক সেন্টারের মুখপাত্রের অপর একটি উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয় আমেরিকান ইহুদিরা তাদের দেশ (ইসরায়েল) এর জন্য কাজ করছে। অথচ মুসলমানদের এ ধরণের কোন কার্যক্রম নেই।

টাইম ম্যাগাজিনে যখন লেখাটি প্রকাশিত হয় তখন ছিলো রাষ্ট্রপতি রিগানের শেষ সময়। এরপরে তার দলেরই বুশ (বুশের পিতা) রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে ইরাক আক্রমণ করেন। এতে মুসলমানরা মুষড়ে পরেন। আমেরিকান প্রশাসন সবসময় ইহুদিদের ও তাদের জন্য অধিকৃত প্যালেস্টাইনে গড়া ইসরায়েল দেশের প্রতি অতি সহানুভুতিশীল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার তেত্রিশতম রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান এর বিশেষ উদ্যোগে ইসরায়েল গঠন করা হয়েছিল। এতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রি চার্চিলের পূর্ব থেকেই সমর্থন ছিল। ট্রুম্যান বিশ্বাস করতেন যে ইসরায়েল গঠন করা তার ধর্মীয় দায়ীত্ব।

জাতিসংঘে কোনরকম পূর্বাভাস না দিয়ে এমনকি জাতিসংঘে নিযুক্ত আমেরিকান প্রতিনিধিকে এব্যপারে কিছু না জানিয়েই তিনি ইসরায়েলকে স্বীকৃত দেন। এজন্য জাতিসংঘের আমেরিকান প্রতিনিধি রেগে যান। ট্রুম্যান অবশ্য তার মেয়াদ পূর্তির শেষের দিকে বিড়ম্বনায় পড়েন। তার প্রতি জন সমর্থন এত কমে যায় যা ইতোপূর্বে ঘটেনি। তিনি তৃতীয় বার রাষ্ট্রপতি হওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

কংগ্রেস নতুন আইন প্রনয়ণ করে ট্রুম্যানের এই ইচ্ছা পূরণ হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। তিনি অবশ্য রুজভেল্টের মৃত্যুর ফলে উপ-রাষ্ট্রপতি থেকে প্রথমবার রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বার্চিত হয়ে নয়্। অন্যদিকে চার্চিল ছিলেন ইহুদিদের প্রতি বিশেষ সহানুভূতিশীল। উল্লেখ্য যে খ্রীষ্টানদের বিশেষ করে রক্ষণশীলদের বিশ্বাস যে যীশুখ্রীস্ট পূণরায় পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে প্রথমে পদার্পন করবেন প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের দখলকৃত এলাকায়। তবে এই এলাকা ইহুদিদের দখলে না থাকলে যীশুখ্রীস্টের আবির্ভাব বিলম্বিত হবে ।

যাহোক বর্তমান বুশের পিতা ভেবেছিলেন ইরাক আক্রমণ হবে তার জন্য আশীর্বাদ। জনগণ মহা উৎসাহে তাকে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবে। কিন্ত তার সে আশা পূরণ হয়নি। উক্ত নির্বাচণে ১৯৯২ সালে ডেমোক্রাট দলের ক্লীনটন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী আটটি বছরে মুসলমানদের জন্য কোন সুসংবাদ না থাকলেও বড় কোন দুঃসংবাদ ছিলোনা।

এরপরে ২০০০ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন বুশের পুত্র। শুরু থেকে তিনি ইরাকের শাসক সাদ্দাম হোসেনকে শায়েস্তা করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। সাদ্দামের অনেক অপরাধ। বিভিন্ন রকম অর্থনৈতিক অবোরোধ দিয়েও তাকে শায়েস্তা করা যাচ্ছিল না। এছাড়া সে ভীষণ বেয়াদবি করে বুশের পিতা যখন ইরাক আক্রমণ করেন। ওই সময় সে বিস্তর মিসাইল ছোড়ে তাদের প্রিয় দেশ ইসরায়েলে। সাদ্দাম হোসেন প্রত্যক্ষভাবে প্যালেস্টাইনী যোদ্ধাদের সাহায্য করছিলেন। অচিরেই কনিষ্ঠ (জুনিয়র) বুশের সে সুযোগ এসে যায়। ৯/১১ হয়ে যায় তার জন্য আশির্বাদ। ঢুকে পড়েন আফগানিস্থানে।

এরপর দখল করে নেন ইরাক। সেইসাথে চলতে থাকে ‘ইসলামিক টেরোরিস্ট’ প্রচারনা। বুশের সাথে দুই হাত তুলে মহা উৎসাহে যোগ দেন চার্চিলের উত্তরসূরী ব্লেয়ার। বিগত প্রায় দুই শত বছরের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ এই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রি (১৯৯৮ সালের মে মাসে নির্বাচনের সময় বয়স ছিল ৪৩ বৎসর) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে’র সেন্ট জন কলেজে আইনের ছাত্রকালীন সময়ে গভীরভাবে ধর্মীয় বিশ্বাসী হয়ে পড়েন। এ ব্যপারে তার উৎসাহদাতা ছিলেন ফাদার পিটার থম্সন নামক একজন এ্যাঙলিক প্রিস্ট । প্রায় দুই বছর ধরে ব্লেয়ার ওই ফাদারের সাথে প্রতি রাতের শেষে গভীর আলোচনায় বসতেন।

এই ভাবে তিনি চার্চ অব ইংল্যান্ডের বিশ্বস্ত ভক্ত হয়ে পড়েন। থম্সন্ একসময় ব্লেয়ারের সামনে জন ম্যাকমুররে নামক একজন স্কটিশ দার্শনিকের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। যা থেকে ব্লেয়ার খ্রীস্টান হিসেবে সমাজ উন্নয়নে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েন । তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে খ্রীষ্টান ধর্ম শূধুমাত্র একজন মানুষ ও ইশ্বরের মধ্যে একক সম্পর্ক নয়, এর থেকে আরও বেশী কিছূ। এই সম্পর্ক বিশ্বের বাহিরেও বিস্তৃত। আইনে ডিগ্রী নেয়ার পরপরই ১৯৮০ সালে তিনি বিবাহ করেন একজন ব্যারিষ্টারকে। তার স্ত্রীও একজন ধার্মিক ক্যাথলিক। ব্লেয়ার ও বেশীরভাগ বৃটিশ ভোটারদের মধ্যে পার্থক্য হলো এই যে তিনি নিয়মিত চার্চে যান এবং তার জেষ্ঠ্য পুত্রকে রোমান ক্যাথলিক স্কুলে পড়িয়েছেন।

যাহোক বুশ ও ব্লেয়ারের সাথে সাথে ‘ইসলামিক টেরোরিস্টরাও’ বসে থাকেনা। একের পরে এক ঘটনা ঘটিয়ে ‘ইসলামিক টেরোরিস্ট’ প্রচারনাকে তুঙ্গে তুলে দেয়। শুরু হয় মুসলিম দমন। বুশের দেশে এফবিআই আর ব্লেয়ারের দেশে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড শুরু করে মুসলমানদের ধরপাকড়। মুসলিম মহল্লায় আর মসজিদে এখন কড়া নজরদারী। রাস্তাঘাটে, মার্কেটে, এয়ারপোর্টে মসজিদে শরীরে হাতাহাতি। বুঝিয়ে দিচ্ছে মুসলমান হওয়ার সাধ। বিভ্ন্নি উপায়ে সামাজিকভাবে মুসলিমরা হচ্ছে বিব্রত। মুসলমানদের ব্যপারে মনে হচ্ছে সামাজিক ও নাগরিক অধিকার এখন অপ্রযোজ্য নয়।

মুসলিম মহিলারাও নিস্কৃতি পাচ্ছে না। ইউরোপের কয়েকটি দেশে এখন বোর্কা পরা তো দূরের কথা, মাথায় কোন ঘোমটা দেয়া নিষিদ্ধ। স্কুলে মেয়েদের স্কার্ফ পরা বন্ধ। কয়েকদিন আগে আটলান্টার ডগ্লাসভিল সিটিতে আদালত প্রাঙ্গনে ঢোকার সময় মাথা থেকে স্কার্ফ খুলে ফেলতে অস্বীকার করায় একজন কালো আমেরিকান মুসলিমকে গ্রেফতার করে বিচারকের সামনে হাজির করা হলে তিনি ওই মহিলাকে আদালত অবমাননার দায়ে ১০ দিনের কারাবাসে পাঠিয়ে দেন। অথচ জর্জিয়া এটর্নি জেনারেল উল্লেখ করেন থার্বাট বাকের এর মুখপাত্র কেলেই জ্যাকসন্ যে মন্তব্য করেন যে স্টেট আইনে স্কার্ফ পরা অনুমোদন বা নিষিদ্ধ করা হয়নি । ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘কাউন্সিল অন্ আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন’ নামক একটি সংঘঠন ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য আবেদন করলে অবিশ্বাস্য ভাবে ভ্যালেনটাইন মুক্তি পান। “আমি শুধু উপলব্ধি করলাম যে আমার মানবিক ও নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হলো”, মন্তব্য করেন ভ্যালেনটাইন ।

বুশ+ব্লেয়ারের এই যৌথ প্রচেষ্টার পরও মুসলমানদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমনকি ২০০১ সালের ৯/১১ ঘটনার এক বছরের মধ্যেই অমেরিকাতে মুসলমানদের সংখ্যা ত্রিশ হাজার এবং ইউরোপে বিশ হাজারেরও অধিক বৃদ্ধি পায়। নির্মিত হচ্ছে নতুন নতুন মসজিদ। গত জুন মাসে বোস্টোন শহরে নব নির্মিত মসজিদে ২,০০০ মুসলিম নামাজ আদায় করলেন। ইসরায়েলের সমর্থকদের ও মিডিয়ার বিরোধীতা এবং আদালতে মামলা দায়েরের ফলে এই মসজিদ নির্মাণ সমাপ্তিতে বিলম্ব হয়। তাদের অভিযোগ ছিল যে মসজিদ চরমপন্থিদের সহায়তার জন্য দায়ী ।

এই অভিযোগ মানহানিকর অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে বোস্টোন ইসলাম সোসাইটি মামলা দায়ের করে জয়ী হয়। ফ্রান্সেও সত্তুর দশকে ৫০টি নামাজের ঘর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৩ সালে ১৫২৫টিতে দাড়ায় এবং মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য ১০০ টি ভবন নির্মিত হয়। বর্তমানে উভয় মিলে আরও ৭০ টি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃটেনে গত ২০ বছরে মসজিদ ও নামাজের ঘরের সংখ্যা ৪০০ থেকে ১৬৯৯ টিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। বার্লিনে এই সংখ্যা ছিল ১৯৯৮ সালে ৬৬ টি এবং ২০০৬ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৬ টি। দি ইকোনমিস্ট পত্রিকার মতে পশ্চিমা দেশসমুহে মসজিদ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে পড়ছে।” সূত্র: এপি



No comments:

Post a Comment

Note: only a member of this blog may post a comment.