আমাদের ভাবনা
===========================================
নিঃস্বার্থ ভাবে যা করার আল্লাহকে ভয় করে পরকালের জন্য করুন।
কাউকে কিছু দান করার পরে বলবেন না, “আমার জন্য দোয়া করো” । কারণ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, "তারা আল্লাহর ভালোবাসায় অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলেঃ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।" (সূরা দাহর/ইনসানঃ ৮-৯)
.
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি ফকিরকে সাহায্য করার পর তার কাছে দোয়া বা কৃতজ্ঞতা চাইবে সে এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এই কারণে যে, দোয়া সবচেয়ে বড় প্রতিদান ও উচ্চ পর্যায়ের কৃতজ্ঞতা। দানকারী যখন এগুলো চাইবে, তখন সে যেন তার দানের বিনিময় চাইল। (মাজমূ ফতোয়া- ইবনে তাইমিয়া ১১/১১১ পৃ)
============================================
নিউরাল বেসিস অফ হলি 'রেইনট্রি': পর্ব-২
জৈবিক আকাঙ্খা জাগ্রত হয় সেক্স হরমোন নির্গমনের মধ্য দিয়ে, পুরুষের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরোন হরমোন আর নারীর ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন। টেস্টোস্টেরোন হরমোন পুরুষের যৌনতা, ডোমিনেন্স, এগ্রেসিভনেস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। যারা বলে ছেলে মেয়ে একসাথে বসে গল্প করার সাথে যৌনতার সম্পর্ক কি? এমনকি কেউ এমন প্রশ্ন করলে তাকে চূড়ান্ত অসামাজিক আবার ব্যাক ডেটেড মনে করা হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা কিন্তু উল্টো কথা বলে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের উপস্থিতি ছেলেদের টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা ৭.৮% বাড়িয়ে দেয় এমনকি মেয়েটি দেখতে কদাকার হলেও। নারীর মাত্র ৫ মিনিটের উপস্থিতি পুরুষের লালায় টেস্টোস্টেরোনের মাত্র বাড়িয়ে দিতে পারে। 'Rapid endocrine responses of young men to social interactions with young women' শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে একটা ছেলে যখন একটা মেয়ের সাথে একাকী গল্পগুজব করে তখন সেই ছেলের লালায় টেস্টোস্টেরোনের পরিমান অন্য আরেকটি ছেলের সাথে একাকী সময় কাটানোর থেকে বেশি।
বন্ধুদের আড্ডায় যে ছেলেটিকে প্রাণবন্ত, ইম্প্রেসিভ ও অনেক খোলামেলা মনে হয়, যার কথা আপনাকে মুগ্ধ করে অথবা আপনি (মেয়ে) বুঝতে পারেন যে ছেলেটি আপনাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে, ধরে নিতে পারেন এর পিছনে ছেলেটির হাই টেস্টোস্টেরোন লেভেল কলকাঠি নাড়ছে। 'Men with elevated testosterone levels show more affiliative behaviours during interactions with women' শিরোনামে আরেকটি প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ফিমেল ইন্টারএকশনের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বেড়ে গেলে ছেলেদের বিহেভিওরাল পরিবর্তন আসে। কথায় মুগ্ধতা, চিত্তাকর্ষক আচরণ, নিজেকে মেলে ধরা ইত্যাদি দিকগুলো বেশি ফুটে উঠে। গবেষণাটিতে দেখানো হয়েছে ইন্ট্রাসেক্সচুয়াল কম্পিটিশনে ছেলেদের টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বাড়ার ফলে মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ আগের থেকে বৃদ্ধি পায়। এমনকি পরবর্তীতেও এর কার্যকারিতা বহাল থাকে ফলে দেখা যায় ছেলেরা আগের থেকে বেশি হাসছে, নিজেকে উপাস্থপনের ক্ষেত্রেও অতিরঞ্জন করছে , মেয়েদের প্রতি চোখাচোখির পরিমান বেড়ে যাচ্ছে। মজার বিষয় হলো কম্পিটিশনটা যখন ছেলেদের নিজেদের মধ্যে থাকে তখন কোনো ছেলের মধ্যে এই ধরণের পরিবর্তন চোখে পড়ে না।
অনেকে হয়তো ভাবছেন, সুন্দর হাসি বা ঢং করে কথা বলা বা আড্ডা জমিয়ে রাখা ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বাড়লেও যারা একটু বদমেজাজি, রাগী তাদের মধ্যে এই সব জৈবিক হরমোনের কোনো প্রভাব নাই, তাই তাদের সাথে মেলা মেশায় সমস্যা নাই। আপনাকে হতাশ করে দেয়া এই স্টাডিতে 'The presence of a woman increases testosterone in aggressive dominant men' বলা হয়েছে যারা দীর্ঘদিন যাবৎ সঙ্গীহীন বা রোমান্টিক সম্পর্কে নাই তাদের এগ্রেসিভ আচরণ ও ডোমিনেন্সির মূলকারণ উচ্চ মাত্রার টেস্টোস্টেরোন।
মূলকথা ও অপ্রিয় সত্য হলো, নারীর উপস্থিতি পুরুষের জৈবিক হরমোনাল রেগুলেশনের মূল অনুঘটক। আজকে আমাদের আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনার মূল উদ্ধার করতে গলদঘর্ম হওয়ার মূল কারণ নারী ও পুরুষের যে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি আছে সেই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া। এর আগের আমরা জেনেছি নারীদের ক্ষেত্রে জৈবিক ক্রিয়ার মেকানিজম পরুষের থেকে আলাদা। একই ঘটনা, একই জিনিস একই সময়ে একই স্থানে ঘটলেও পুরুষের ক্ষেত্রে তার প্রতিক্রিয়া নারীদের থেকে আলাদা। একটা মেয়ে যখন ছেলেদের সাথে আড্ডা দেয়, তখন মেয়েটার দৃষ্টিভঙ্গি একরকম থাকে আর অধিকাংশ ছেলেরা ব্যাপারটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়, এর পিছনে যে বৈজ্ঞানিক কারণ আছে তা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা।শুধু আবেগ আর ট্রেন্ড ফলো না করে বাস্তবতা ও সত্যটাকে মেনে নিয়ে পথ চললে এসব দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকা খুবই সম্ভব।
নিউরাল বেসিস অফ হলি 'রেইনট্রি': পর্ব-৩
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, নারী ও পুরুষের হরমোনাল রেগুলেশন ও তাদের এক্টিভেশন প্যাটার্ন আলাদা। পুরুষের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য যেমন নারীর উপস্থিতি ভূমিকা পালন করে তেমনি নারীদের এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন বেড়ে যাওয়ার পিছনেও অল্পবিস্তর হলেও পুরুষের উপস্থিতি ভূমিকা পালন করে। পার্থক্য হলো, পুরুষের বিহেভিওরাল সাইকোলজি নারী থেকে আলাদা।
এখন প্রশ্ন হলো, প্রাকৃতিকভাবে পুরুষের আত্মনিয়ন্ত্রণহীনতা, পারিপার্শিক পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হওয়া কি তাদের অনৈতিক কাজের বৈধতা দেয়? বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হলো যে নারীর উপস্থিতি পুরুষের মনকে প্রভাবিত করে, এর মানে কি তাহলে পুরুষেরা স্বনিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে? এবং সব দায়ভার নারী ও চারপাশের পরিবেশের উপরে চাপাবে? অত্যন্ত জটিল ও সূক্ষ একটি বিষয়। মোটাদাগে বলতে হবে, অবশ্যই পুরুষেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করে চলবে। এখন প্রশ্ন হলো, এই 'নিয়ন্ত্রণের' মাত্রাটা কেমন হবে? এটা কে নির্ধারণ করবে? কেউ যদি চায় পুরুষ সবসময় ও যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবে সেটা হবে অন্যায় ও অবিচারমূলক আবদার। একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থাই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। এমনকি আইন প্রয়োগ করেও এটা দূর করা সম্ভব নয়। স্ট্যাটিসটিক্স অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ সংগঠিত হওয়া দেশগুলোর আইন পরিস্থিতি বাকি বিশ্বের থেকে ভালো।
নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণের অন্য কোনো উপায় নেই। প্রভোকেটিভ আচরণ পরিহার করলে বিপরীত লিঙ্গের অতি আক্রমণাত্মক ও অনিয়ন্ত্রিত আচরণ দূর হতে পারে। বাস্তবতা হলো, ফেমিনিস্টরা যতই চিল্লা ফাল্লা করুকনা কেনো, তাদের কোনো ক্ষমতা বা প্রভাব নেই এই অবস্থা উত্তরণের ক্ষেত্রে। স্বাধীনতার নামে আমি যা খুশি তা করবো এবং এর ফলাফল ভোগ করবো না এটা সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত। সাধারণত ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসীরা এই ধরণের অনৈতিক আচরণ থেকে দূরে থাকে। কোনো প্রচলিত আইন বা শাস্তির ভয়ে নয়, বিশ্বাসের জায়গা থেকে তারা এসব পরিহার করে। ধর্মীয় জীবন যাপনে অভ্যস্ততা আনতে পারলে সমাজে প্রচলিত অনেক অন্যায় ও অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
========================================
অথচ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে। (সূরা হামিম সেজদা : ৫৩)। তিনি আরও বলেন, বিশ্বাসীদের জন্যে পৃথিবীতে রয়েছে নিদর্শন এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও তোমরা কি অনুধাবন করবে না। (সূরা যারিয়াত : ২০, ২১)। আর এজন্যেই বোধয় সস্প্রতি মানুষের শ্বাসনালী (ট্রাকিয়া) ও ডান ফুসফুস নালীর (ব্রংকাস) সিটি স্ক্যান (কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি স্ক্যান) করে দেখা গেছে তাতে আরবি হরফে লেখা রয়েছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহুম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা.। এ সত্য আবিস্কার করেন একজন জার্মান ডাক্তার। পরে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। (মাসিক পৃথিবী, ডিসেম্বর ১৯৯০, পৃ. ৪৯)। মানবদেহ নিয়ে গবেষণা চলবে অনন্তকাল। সত্যিকারের ঈমানি অনুভূতি নিয়ে মানবদেহে গবেষণা চালালে আরও নিদর্শন হয়তো বেরিয়ে আসবে। হাদিসে এসেছে, যে নিজেকে চিনতে পেরেছে, সে তার রবকে চিনতে পেরেছে।
========================================
আল্লাহর কী কুদরত, দুই সমুদ্রের মিলনমেলায়ও মিশে যায়নি!
,
,
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, 'নিশ্চয় আকাশ-জমিন সৃষ্টি ও রাতদিন বিবর্তনের মাঝে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।' (সূরা আলে ইমরান : ১৯০)। সমুদ্রের মাঝেও রয়েছে অগণিত নেয়ামত আর আশ্চর্য সব নিদর্শন। তেমনি একটি মহা কুদরতি নিদর্শন হচ্ছে দুই সমুদ্রের সংযোগ। দুই সমুদ্রের পানি পরস্পর সম্মিলিত হয়েছে কিন্তু কী আশ্চর্য তা একাকার হয়ে মিশে যায়নি। একটি আরেকটি থেকে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে। উভয়ের মাঝে আছে অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর। আল্লাহ তায়ালা এ কুদরতি নিদর্শন বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, 'তিনিই দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেছেন সমান্তরাল করে। একটি সুমিষ্ট ও তৃষ্ণা নিবারক এবং অন্যটি লোনা ও বিস্বাদ। আর উভয়ের মাঝে রেখেছেন এক অন্তরাল ও দুর্ভেদ্য প্রাচীর। (সূরা ফুরকান : ৫৩)। অন্যত্র এসেছে, 'তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন। উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরায় (প্রাচীর) যা তারা অতিক্রম করে না।' (সূরা রহমান : ১৯-২০)। কোরআনে বর্ণিত এ কুদরতি নিদর্শন যুগে যুগে প্রমাণিত হয়েছে। আধুনিককালে Marine Science I Oceanology তথা সমুদ্রবিজ্ঞান এর প্রমাণ পেয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্রে এর বাস্তব চিত্র দেখা গেছে। আটলান্টিক মহাসাগরকে ভূমধ্যসাগরের পানির সঙ্গে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। কিন্তু উভয়ের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। ভূমধ্যসাগরের পানি অধিক লবণাক্ত, বিস্বাদ ও ঘন। ভূমধ্যসাগরের পানি জিব্রাল্টার সেল বা সাগরের তলের উঁচু ভূমির ওপর দিয়ে আটলান্টিক সাগরের ভেতরে শতাধিক কিলোমিটার প্রবেশ করেছে এবং তা এক হাজার মিটার গভীরে পৌঁছার পরও তার উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যে সামান্য পরিবর্তন হয়নি। অথচ উভয়ের মাঝে রয়েছে প্রবল খরস্রোত ও উত্তাল তরঙ্গ। কিন্তু পানি মিশছে না। যেন উভয়ের মাঝে পর্দা পড়ে আছে। এ অন্তরায় বর্ণনা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এসেছে, 'বল কে দুই সমুদ্রের মাঝে অন্তরায় রেখেছেন? সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে কি কোনো উপাস্য আছে? মূলত তাদের অধিকাংশই জানে না।' (সূরা নামল : ৬১)। এভাবে আলাস্কা উপসাগরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে দুই ধরনের পানির স্রোতরেখা। এ স্রোতরেখায় প্রবহমান পানি একটি আরেকটির সঙ্গে মিশে না। প্রশান্ত মহাসাসাগরের শাখা হচ্ছে আলাস্কা উপসাগর। বিজ্ঞানীদের মতে এ পানি না মিশার কারণ হচ্ছে তাতে দুই মহাসাগরের সংযোগ ঘটেছে। উপসাগরটির মাঝ বরাবর পানির প্রবাহ আলাদা হয়ে বয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মনির খাশুকজি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি বাহরাইন উপসাগরের জলস্রোতে এরকম একটি স্থান দিয়ে অতিক্রম করেছিলাম। নৌকায় চলতে চলতে সেই বাঁধ (প্রাচীর) বরাবর গেলাম। খুব কাছে থেকে উভয় দিকের পানি মুখে দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলাম। পরীক্ষায় দেখা গেল, উভয় দিকের পানি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কী আশ্চর্য! একটার পানি লোনা, বিস্বাদ কিন্তু অপরটির পানি সুপেয়, মিষ্ট ও তৃষ্ণানিবারক। সমুদ্রের মাঝে এটা এক বিস্ময়কর কুদরত, যা মহান আল্লাহ তায়ালার অলৌকিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। আধুনিক কালের বিজ্ঞানীরা এতে বিস্ময়াবিষ্ট হয়েছেন। কোরআনের বিশুদ্ধতা অকপটে স্বীকার করেছেন। অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ফ্যান্সের প্রথিতযশা সমুদ্রবিজ্ঞানী জ্যাক ভি কোস্টা (Jack V Costa)। সমুদ্রের তলদেশের বিভিন্ন আবিষ্কারে তার অবদান অনস্বীকার্য। দুই সমুদ্রের মিলনদৃশ্য নিয়ে তিনি ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তিনি তার রিসার্চে উপলব্ধি করেছিলেন যে, রোম সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর রাসায়নিক মিশ্রণের গুণাবলি ও মাত্রা দিক দিয়ে একটি আরেকটি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি এ বাস্তবতা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার জন্য জিব্রাল্টারের দুই সমুদ্রের সংযোগস্থলে গবেষণা চালালেন। তিনি দেখলেন, জিব্রাল্টারের উত্তর তীর (মারুকেশ) আর দক্ষিণ তীর (স্পেন) থেকে আশ্চর্যজনকভাবে একটি মিষ্টি পানির ঝরনা উথলে ওঠে। এ ঝরনাটি উভয় সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ৪৫০ সূক্ষ্ম কোণে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হয়ে চিরুনির দাঁতের আকার ধারণ করে বাঁধের মতো কাজ করে। ফলে রোম সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের পানি একটি আরেকটির সঙ্গে মিশে না। পরে তাকে আল কোরআনে বর্ণিত আয়াতটি শোনানো হলো। তিনি দেখলেন, কোরআনে বর্ণিত তথ্যের সঙ্গে তার গবেষণার সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। জ্যাক ভি কস্টা চিন্তা করলেন, ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর মতো নিরক্ষর মানুষ সমুদ্রের তলদেশ পর্যবেক্ষণ করে এসব তথ্য কোরআনে লিখতে পারেন না। তাহলে কোরআনে সমুদ্র বিজ্ঞানের এ মহা তথ্য কীভাবে এলো? নিশ্চয় আল কোরআন ঐশী সত্য গ্রন্থ। এটা কোনো মানব রচিত নয়। Jack V Costa মুসলমান হয়ে গেলেন। পবিত্র কোরআনের এমন অলৌকিকতা সর্বকালে প্রমাণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিশ্চয় আল কোরআন মীমাংসাকারী বাণী এবং এটি নিরর্থক নয়।' (সূরা আত তারিক : ১৩-১৪)। অর্থাৎ পবিত্র কোরআনের প্রতিটি বিষয় তাৎপর্যপূর্ণ এবং বাস্তবতার বিচারে সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ। দুই সমুদ্রের মিলন সম্পর্কিত বিষয়টি আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় সঠিকত্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে 'মারাজাল বাহরাইন' শব্দ ব্যবহার করেছেন। 'মারাজা' শব্দের অর্থ হচ্ছে, স্বাধীনভাবে প্রবাহিত করা। ছেড়ে দেয়া। অর্থাৎ দুই সমুদ্রের পানি একই সঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে কিন্তু মাঝখানে আছে দুর্ভেদ্য প্রাচীর, যার ফলে তারা পরস্পর মিশ্রিত হতে পারছে না। প্রত্যক্ষদর্শী বিজ্ঞানীরা প্রাচীরের ব্যাপারটি স্পষ্ট লক্ষ করেছেন। পবিত্র কোরআনে 'বাঁধ বা অন্তরালের' কথা এসেছে। স্মর্তব্য যে, দুই সমুদ্রের মিলন দৃশ্য বাংলাদেশেও দেখা গেছে। নদীপথে চাঁদপুর যেতে 'রাজবাড়ী বহর' নামক স্থান পড়ে। এ স্থানে দেখা যায়, পদ্মা ও মেঘনার পানি পাশাপাশি প্রবাহিত হচ্ছে, কিন্তু কেউ কারও সঙ্গে মিশে যাচ্ছে না। পদ্মার পানি ঘোলাটে আর মেঘনার পানি কুচকুচে কালো। লক্ষ থেকে এ দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যায়। পাঠক, অনুসন্ধানী হলে সেখানে গিয়ে বাস্তবে এ দৃশ্য দেখে আসতে পারেন। এছাড়াও বরিশালের 'বলেশ্বর নদী' থেকে দুইটি ধারা প্রবাহিত হয়েছে। এক ধারার পানি লোনা ও বিস্বাদ এবং অন্য ধারার পানি মিষ্ট ও সুস্বাদু। (তাফসিরে উসমানি : ৩/৩১৯)। বিষয়টি আমাদের সাধারণ মনে হলেও সমুদ্রবিজ্ঞানীদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও আশ্চর্যজনক। পৃথিবীতে আল্লাহর কুদরতি নিদর্শনাবলির অন্ত নেই। পাহাড়-পর্বত, আকাশ-জমিন, নদ-নদী, চন্দ্র-সূর্য, তরুলতা ও পাখ-পাখালি সবই আল্লাহর কুদরতের সৃষ্টি। এগুলোর সৃষ্টি মানুষের কল্যাণার্থে। পাশাপাশি এতে উপদেশও নিহিত আছে। জ্ঞানীরা এসব দেখে আল্লাহর পরিচয় লাভ করে। ঈমান মজবুত করে।
২৬ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ
==========================================

No comments:
Post a Comment
Note: only a member of this blog may post a comment.