যারা ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন উপস্থাপন করেন এবং ইসলামকে বিশুদ্ধভাবে জানতে চান তাদের জন্য আমাদের এই উপহার ।
▼
Pages
▼
Tuesday, 3 September 2019
ভাগ্য আসলে কি ?
ভাগ্য আসলে কি ? এর উপর বিশ্বাস ও এর গুরুত্ব ।
এবং ভাগ্য সম্পর্কে আপনার মনের লুকায়িত কয়েকটি সন্দেহের সমাধান ।
আল ক্বাদা ওয়াল ক্বাদার ( আল্লাহর ইচ্ছা ও তাকদীর )
লক্ষ্য করুন যে " আল ক্বাদা " (আল্লাহর ইচ্ছা) দ্বারা যা বুঝায় তা হল , এই বিশ্বজগতে যা কিছু ঘটে তার সবই আল্লাহর ইচ্ছা ও নিয়তির (তাকদীর) কারণে ঘটে- এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বিশ্বাস ।
" আল-ক্বাদার " ( তাকদীর ) হল ইসলামের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের একটি । তাকদীর অর্থ ভাগ্য ।
ইসলামের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের একটিতে অবিশ্বাস করলে ঈমান পরিপূর্ণ হয় না ।
আল-ক্বাদারে বিশ্বাস পরিপূর্ণ হয় না ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না আল-ক্বাদা’র এর নিম্নোক্ত চারটি বিশেষ বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা হয়............
১. আল্লাহ্ সবকিছু জানেন
সাধারণভাবে এবং বিশদভাবে , অনাদি থেকে অনন্ত পর্যন্ত এই বিশ্বজগতের অণু পরিমাণ খবরও
আল্লাহ্র অজানা নয় -এই বিশ্বাস রাখা।
২.লাওহে মাহফূযে পূর্বেই সব লিপিবদ্ধ
এই বিশ্বজগত সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ্ কি ঘটবে না ঘটবে তার পরিপূর্ণ বর্ণনা লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন - এই বিশ্বাস রাখা।
৩. এই বিশ্বাস রাখা যে আল্লাহর ইচ্ছা অপ্রতিরোধ্য
এই মহাবিশ্বে যা কিছু ভাল-মন্দ ঘটে , তাঁর ইচ্ছাতেই সেগুলো ঘটে ।
৪.ভালো মন্দ সব কিছু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন
এই বিশ্বাস রাখা যে সমস্ত সৃষ্টিজগৎ মহান আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টি। তিনিই সকল সত্তার সৃষ্টিকর্তা এবং তাদের যাবতীয় গুণাবলী ও কর্মসমূহের সৃষ্টিকর্তা, যেমনটি তিনি বলেন কুরআনে......
" তিনিই আল্লাহ্ , তোমাদের পালনকর্তা । তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা । অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তিনি প্রত্যেক বস্তুর কার্যনির্বাহী । "
[ সূরা আন’আম ১০২ ]
আল-ক্বাদারে সঠিকভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা নিম্নোক্ত বিষয়সমূহকেও অন্তর্ভূক্ত করে......
১. ব্যক্তি মাত্রেরই নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি রয়েছে
যেমনটি আল্লাহ্ কুরআনে বর্ণনা করেন ,
" আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না " [ বাক্বারা ২৮৬ ]
২. কোন ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি আল্লাহর ইচ্ছা ও তাকদীর ব্যতীত কাজ করে না
আল্লাহ্ তাকে সামর্থ্য দান করেছেন ভালো-মন্দের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করার এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার, যেমনটি আল্লাহ্ কুরআনে বলেন ,
" তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না। " [ ৮১ : ২৯ ]
৩. আল-ক্বাদার হচ্ছে সৃষ্টিকুলের জন্য আল্লাহর পরিকল্পনা
তিনি এই পরিকল্পনার যতটুকু আমাদের সামনে উন্মোচন করেছেন, আমরা ঠিক ততটুকুই জানি ও তাতে বিশ্বাস করি এবং যেটুকু তিনি আমাদের নিকট হতে গোপন রেখেছেন, আমরা সেটুকু মেনে নেই ও এতে বিশ্বাস করি।
আল্লাহর কর্মপন্থা ও আইন কানুন সম্পর্কে আমরা আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান ও বোধশক্তি দ্বারা আমরা বিতর্ক না করি বরং আমরা আল্লাহর প্রজ্ঞা ও ন্যায়বিচারের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করি এবং তিনি কি করেন বা না করেন, আমরা সেটা সম্বন্ধে প্রশ্ন না তুলি , সমস্ত প্রশংসা ও পবিত্রতা তাঁরই জন্য।
ইসলামে আল-ক্বাদারে বিশ্বাস করার মর্যাদা
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে যখন জিবরাঈল (আঃ) তাকে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন...
" ঈমান হল আল্লাহকে বিশ্বাস করা, ফেরেশতা, ওহী/আসমানী কিতাবসমূহ, রাসূলগণ এবং শেষ দিবসের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ও তাক্বদীরের ভালো-মন্দের ওপর বিশ্বাস করা। " [ মুসলিম ৮ ]
আল-ক্বাদার সম্পর্কে আল্লাহ্ কুরআনে বলেনঃ
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
" আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে ( ক্বাদর সহকারে ) সৃষ্টি করেছি। " [ ৫৪ : ৪৯ ]
وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ قَدَرًا مَّقْدُورًا
" আল্লাহর আদেশ নির্ধারিত, অবধারিত। "[ ৩৩ : ৩৮ ]
মানবীয় বোধশক্তি দ্বারা আল-ক্বাদারের বিষয়াবলীতে যুক্তিতর্কের প্রতি সতর্কবাণী
একজন মানুষ আল্লাহর প্রতি কতটুকু বিশ্বাস করে তার প্রকৃত পরীক্ষা হল আল-ক্বাদারে বিশ্বাস।
এটা হল সত্যিকারের একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে একজন মানুষ তাঁর স্রষ্টা সম্বন্ধে কতটুকু অবহিত এবং আল্লাহর ক্ষমতা ও নির্ভুলতা সম্পর্কে তার সেই একনিষ্ঠ বিশ্বাস কি ফলাফল প্রতিষ্ঠা করে তার জীবনে, সেটা নিরূপিত হয়।এর কারণ হল, আল-ক্বাদার সেই ব্যক্তিকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন করে যে তার নিজস্ব সীমাবদ্ধ বোধ-বুদ্ধি দ্বারা এই বিষয়টিকে পুরোপুরি উপলব্ধি করার চেষ্টা করে।
আল-ক্বাদার এর ব্যাপারটি নিয়ে অনেক যুক্তিতর্ক এবং বিরোধের অবতারণা হয়েছে এবং এ সম্পর্কে কুরআনে নাযিলকৃত আয়াতসমূহের অপব্যাখ্যাও হয়েছে। অবশ্য, ইসলামের শত্রুরা সব যুগেই আল-ক্বাদার এর বিষয়ে মুসলিমদের ঈমানে সংশয় তৈরি করেছে এবং উস্কানি দিয়েছে। সুতরাং, কেউই সত্যিকার ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে না যতক্ষন না সে তাঁর সৃষ্টিকর্তার যাবতীয় প্রশংসনীয় ও শাশ্বত গুণাবলীর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাঁর নাযিলকৃত হুকুম-আহকামের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস রেখে প্রশান্ত চিত্তে সেগুলোর প্রতি আত্মসমর্পণ করেছে। সেই ক্ষেত্রে কোন সন্দেহযুক্ত মতবাদই তার অন্তরে জায়গা করে নিতে পারবে না।
নিঃসন্দেহে, আল-ক্বাদারে বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলামের বাকি স্তম্ভগুলোর প্রতি ঈমান আনার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেননা সীমিত মানবীয় বোধশক্তির দ্বারা কখনোই স্বাধীনভাবে আল-ক্বাদার এর ব্যাপারটিকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়, কারণ আল-ক্বাদার হল আল্লাহর সৃষ্ট রহস্যাবলীর একটি; তিনি এই সম্বন্ধে যতটুকু তাঁর কালামে ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাধ্যমে আমাদের জানিয়েছেন, আমরা ঠিক ততটুকুই জানি, মেনে নিই ও বিশ্বাস করি আর যেটুকু তিনি আমাদের নিকট থেকে গোপন করে রেখেছেন আমরা তাতেও বিশ্বাস করি এবং আমরা তাঁর নির্ভুল ন্যায়বিচার ও প্রজ্ঞায় বিশ্বাস করি, আর এও বিশ্বাস করি যে তাঁর কর্মপন্থা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না বরং আমরাই জবাবদিহিতার সম্মুখীন হব।
আর আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন। মহান আল্লাহ্ যেন তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবাদের প্রতি অফুরন্ত রহমত ও সালাম বর্ষণ করুন।
ভাগ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন ও এর উত্তর
উপরে উল্লেখ্য আল-ক্বাদা’র এর যে চারটি বিশেষ বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপনের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে একটি
লাওহে মাহফূযে পূর্বেই সবকিছু লিপিবদ্ধ বিষয়ক......
অর্থাৎ এই বিশ্বজগত সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ্ কি ঘটবে না ঘটবে তার পরিপূর্ণ বর্ণনা লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন - এই বিশ্বাস রাখা ।
তাহলে এখন আপনার মনে হয়তো এই প্রশ্ন জাগতে পারে যে ,
১. যদি সবকিছু পূর্ব নির্ধারিত হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো সম্পাদনের জন্যে মানুষকে জবাবদিহি করতে কেন ?
২. যেকোন পাপকার্য সম্পাদনের ঘটনা কি তাকদিরে লিখিত এবং আল্লাহ কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত ?
যদি উত্তর হ্যাঁ হয় , তাহলে কেন আল্লাহ তাঁর কিছু বান্দার জন্যে পাপ কার্য সম্পাদনের নিয়তি নির্ধারন করলেন এবং কিছু বান্দার জন্যে ভালো কাজ সম্পাদন নির্ধারণ করলেন, আমরা কি সকলেই সমান মানুষ নই ?
৩. পাপকার্য করলে জাহান্নামে যেতে হবে । কিন্তু কারো ভাগ্যে যদি জাহান্নাম থাকে তাহলে আল্লাহ্ আমাদের কি পরীক্ষার জন্য তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ?
৪. কোন বান্দা পৃথিবীতে এসে পাপকার্য করল । তাহলে শেষ বিচারের মাঠে কি সে বলবে যে আল্লাহ্ এতে আমার দোষ কোথায় , তুমি আমার ভাগ্যে যা রেখেছ তাই ই তো হয়েছে ।
এই ধরনের অনেক প্রশ্নই আপনার মনে জাগতে পারে । আপনার মনের এই সকল প্রশ্নের উত্তর নিম্নে তুলে ধরার চেষ্টা করছি............
আলহামদুলিল্লাহ , একজন ব্যক্তি অবশ্যই দুটি বিষয়ে বিশ্বাস করবেন ,
( ১ )
যে আল্লাহ , তাঁর মর্যাদা সর্বাধিক , তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা , এবং এই সৃষ্টিজগতে কোন কিছুই তাঁর ইচ্ছা ব্যতীরেকে সংঘটিত হয় না । তিনি জানেন অনাগত বিষয় সম্পর্কে , জানেন সামনে কি ঘটতে চলেছে এবং তিনি তাকদীরে সবকিছু নির্ধারিত করেছেন এবং কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন আসমান ও জমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে , একথাটি সহীহ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে । তিনি ন্যায়বিচারক এবং কারো প্রতি বিন্দুমাত্র যুলুম করেন না , কেননা তিনি তাঁর সৃষ্টি থেকে অমুখাপেক্ষী এবং তাদের কাছে তাঁর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই । তিনি পরম দয়ালু এবং চিরন্তনভাবে তাদের প্রতি মহান দাতা , কাজেই কিভাবে তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অবিচার যুলুম করতে পারেন ?
কুর’আন ও সুন্নাহর বহু স্থানে তাকদীরের এই নীতিটি বর্ণিত হয়েছে ,
যেমন এই আয়াতসমূহে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন...............
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
" আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে ( ক্বাদর সহকারে ) সৃষ্টি করেছি । " [ সূরা কামার ৫৪ : ৪৯ ]
" পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না ; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ " [ সূরা হাদীদ ২২ ]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
" আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়তি (তাকদীর) লাওহে-মাহফূযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন " [ মুসলিম ২৬৫৩ ]
( ২ )
মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও ক্ষমতা রয়েছে যার দ্বারা সে কোন কাজ যেমন করতে পারে তেমনিভাবে কোন কাজ না করে তা থেকে বিরতও থাকতে পারে , সে বিশ্বাস যেমন করতে পারে তেমনি অবিশ্বাসও করতে পারে , যে মান্য করতে পারে কিংবা অমান্য করতে পারে , আর এ স্বাধীনতার কারণেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে , দায়ী করা হবে এবং কর্মানুসারে পুরষ্কৃত কিংবা শাস্তি প্রদান করা হবে , যদিও এসব কিছুই আল্লাহ জানেন যে সে কি ধরণের কাজ সম্পাদন করবে , সে মানুষ নিজের জন্য কি নির্বাচন করবে এবং তার শেষ পরিণতি ও গন্তব্যস্থল কি হবে । কিন্তু আল্লাহ তাকে কোন মন্দ কাজ করাতে বাধ্য করেন না , কিংবা কাউকে কুফর নির্বাচন করতে বাধ্য করেন না , বরং তিনি সুস্পষ্টভাবে মানুষকে হেদায়তের পথ দেখিয়ে থাকেন আর এ কারণে তিনি নবী-রাসূল ( তাদের সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক ) প্রেরণ করেছেন এবং আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন এবং সঠিক পথ দেখিয়ে দিয়েছেন । যে কেউ ভ্রান্ত পথের অনুসরণ করে সে তা করে নিজের ক্ষতির জন্যেই ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
" সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত । অতএব , যার ইচ্ছা বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক "
[ সূরা কাহাফ ১৮ :২৯ ]
" আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি । এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয় , না হয় অকৃতজ্ঞ হয় "
[ সূরা ইনসান ৩ ]
" অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে "
[ সূরা যিলযাল ৭-৮ ]
" আওয়াজ আসবেঃ এটি জান্নাত । তোমরা এর উত্তরাধিকারী হলে তোমাদের কর্মের প্রতিদানে "
[ সূরা আরাফ ৪৩ ]
" তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে স্থায়ী আযাব ভোগ কর "
[ সূরা সাজদা ৩২ :১৪ ]
আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তায়ালা বলছেন ,
মানুষের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে ঈমান আনে এবং সৎ কর্ম করে তা করে নিজের ইচ্ছায় এবং স্বাধীনভাবে তা নির্বাচন করে , এরপর সে জান্নাতে প্রবেশ করে অথবা সে অবিশ্বাস করে , মন্দ কাজ করে নিজের ইচ্ছায় এবং স্বাধীনভাবে তা নির্বাচন করে , এরপর সে জাহান্নামে প্রবেশ করে ।
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের অন্তর-বিবেক বুদ্ধি প্রয়োগ করে কিংবা আশেপাশের মানুষদের দেখে জানে যে আমাদের কোন কাজটি ভাল কিংবা মন্দ , কোনটি আনুগত্য কিংবা অবাধ্যতা পাপ-এগুলো করা কিংবা না করা আমাদের নিজেদের ইচ্ছা , এবং আমরা এমন কোন শক্তিও অনুভব করি না যা জোর করে আমাদের এগুলো করতে বাধ্য করে ।
আপনি যেমন অভিশাপ দিতে পারেন , শপথ করতে পারেন , মিথ্যা-গীবত করতে পারেন ঠিক তেমনিভাবে পারেন আল্লাহর প্রশংসা করতে , তার মর্যাদার কথা ঘোষণা করতে , ক্ষমার জন্যে প্রার্থনা করতে , সত্য কথা বলতে এবং ভালো উপদেশ দিতে । আপনি পারেন অলস বিনোদনের স্থানের দিকে অগ্রসর হতে , মন্দ ও মিথ্যার দিকে হেঁটে যেতে আবার আপনি মসজিদ কিংবা আনুগত্য ও ভালো কাজের দিকেও স্বাধীনভাবে অগ্রসর হতে পারেন ।
একজন মানুষ তার হাত দিয়ে আঘাত করতে পারে , চুরি করতে পারে , মিথ্যা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে কিংবা সে পারে অভাবী লোকের সাহায্য করতে , ভালো কাজ অনুগ্রহ করতে । প্রত্যেকেই এই কাজগুলোর মধ্যে থেকে কিছু না কিছু করে থাকে এবং কেউ বলতে পারবে না , তাকে তার নিজের স্বাধীন ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন একটি অদৃশ্য শক্তি তাকে বাধ্য করিয়েছে কিংবা জোর খাটিয়ে এগুলো করিয়েছে বরং সে নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় পছন্দানুসারে ভালো কিংবা মন্দ কাজ করে এবং এর কারণে এই কাজগুলোর জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে ; যদি তার আমল ভালো হয় তাহলে সে এর উত্তম প্রতিদান পাবে আর যদি খারাপ আমল হয় তাহলে সে অনুরুপ মন্দ ফলাফল লাভ করবে ।
আর আল্লাহ যা কিছু নির্ধারিত করেছেন সেগুলো হচ্ছে এমন কিছু বিষয় যা সম্পর্কে মানুষ সেই কাজটি করার আগে জানতে পারে না , এবং সে তার উপর ভিত্তি করে তার কাজ করতে পারে না কিংবা এটাকে কোন অজুহাত হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে না । মানুষের জন্যে এটা মানানসই নয় যে সে তার প্রতিপালকের কাছে প্রশ্ন আবেদন করে জানতে চাইবে কেন তিনি কাউকে অভিশপ্ত করেছেন কিংবা কাউকে ভালো কিছু দান করেছেন । আল্লাহ যাকে অভিশপ্ত করেছেন তার প্রতি অবিচার যুলুম করেননি , বরং তিনি তাকে সময় , স্বাধীন ইচ্ছা ও স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দান করেছেন , উপরন্তু তিনি মানুষের কাছে বার্তাবাহক রাসূল পাঠিয়েছেন, তাদের সাথে তিনি কিতাব নাযিল করেছেন , তিনি মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সতর্ক করেছেন সব ধরনের সতর্কতা দিয়ে যেমন বিপর্যয় ও পরীক্ষা দিয়ে , যাতে মানুষ তাঁর নিকট তাওবা করে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। যদি সে মানুষ ভ্রান্তি ও গোমরাহীর পথ বেছে নেয় এবং অপরাধী পাপীদের পথ অনুসরণ করে তাহলে সে কেবল নিজের ক্ষতি করলো , এবং সে নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিলো , অভিশপ্ত করলো ,
আর একথাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ঘোষণা করছেন,
" যে নিজেকে শুদ্ধ করে , সেই সফলকাম হয় । এবং যে নিজেকে কলুষিত করে , সে ব্যর্থ মনোরথ হয় "
[ সূরা শামস ৯-১০ ]
" তাদের সংবাদ কি এদের কানে এসে পৌঁছায়নি , যারা ছিল তাদের পূর্বে ; নূহের আ’দের ও সামুদের সম্প্রদায় এবং ইব্রাহীমের সম্প্রদায়ের এবং মাদইয়ানবাসীদের ? এবং সেসব জনপদের যেগুলোকে উল্টে দেয়া হয়েছিল ? তাদের কাছে এসেছিলেন তাদের নবী পরিষ্কার নির্দেশ নিয়ে । বস্তুতঃ আল্লাহ তো এমন ছিলেন না যে, তাদের উপর জুলুম করতেন , কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করতো "
[ সূরা তাওবা ৭০ ]
পরিশেষে এ কথা বলা যায় , আল্লাহ হলেন ভালো মন্দ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি সবকিছু পূর্ব নির্ধারিত করেছেন , অভিশপ্ত ও করুণাপ্রাপ্তদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন এই বিশ্বাস পোষণ করার মানে এই নয় যে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর জোর খাটিয়ে কাউকে আনুগত্য করান কিংবা কাউকে অবাধ্যতা করান । বরং তিনি তাঁর বান্দাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রদান করেছেন এবং ভালো মন্দ বাছাইয়ের ক্ষমতা প্রদান করেছেন , আর এর উপরেই বান্দারা ইচ্ছানুসারে আমল করে , যার ফলে তাদের আমলের জন্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে । আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি যুলুম করেন না

No comments:
Post a Comment
Note: only a member of this blog may post a comment.