যেই দুটি আয়াত নিয়ে নন-মুসলিমরা ইসলামকে বুঝে ভুল থাকে তা হলো :
সংগ্রহেঃ এম ডি আলী
১. "তাদেরকে (যারা মুসলিম নন ) তোমরা যেখানেই পাও হত্যা করো। অবিশ্বাসীদের জন্য এটাই প্রতিফল।" -সূরা বাকারা : ১৯১ নং আয়াত।
২. " মুশরিকদের (যারা মুসলিম নন )যেখানেই পাও হত্যা করো " -সূরা তাওবা : ৫ নং আয়াত।
কি বুঝলেন ? যারা এই দুটি আয়াতের উপর ভিত্তি করে ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছেন বা যারা কিনা ইসলাম থেকে মুসলিমদের দূরীভূত করতে চান বিশেষ করে নাস্তিকরা এই ধরণের আয়াত ব্যবহার করে ইসলাম সম্বন্ধে মানুষের খারাপ ধারণা পোষণ করানোর জন্য অথবা ইসলাম কোনো শান্তির ধর্ম নয় তা প্রমান করার জন্য। লেখাটা বড়ো হলেও প্রত্যেকটি নাস্তিক এবং নন-মুসলিম ভাইদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এই পোস্ট টি ,ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করার জন্য।
যারা কিনা মুসলিম নন তারা সচরাচর কোরান পুরোটা নিরপেক্ষ ভাবে না পরেই এরকম আংশিক আয়াত বা এই একটি দুইটি আয়াতের উপর ভিত্তি করে ইসলাম এর সাথে জঙ্গি বা Terrorism কথাটি জুড়ে দেয়। তবে তার আগে বলে দেওয়া ভালো যে ইসলাম কখনোই কোনো নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার অনুমতি দেয় না ,কোনো অবস্থাতেই না। যদি কোনো মুসলিম কোনো নিরাপরাধ মানুষকে খুন করলো তাহলে সে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলো। আপনাকে প্রথমে বোঝা লাগবে যে , যেই দুটি আয়াত আমি প্রথমে দিলাম তার প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে ধারণা থাকা লাগবে ।কারণ কোরানে এক এক আয়াত এসেছে এক এক পরিস্থিতির উপরে ভিত্তি করে। আপনাকে সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়া দরকার তা না হলে অল্প বিদ্যা এর কারণে সারাজীবন ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে অথচ ইসলাম অসম্ভব সুন্দর একটি ধর্ম।
প্রথমে যেই কোরানের আয়াতটি বলেছিলাম তা ছিল আংশিক আয়াত ,তবে ভালো হয় তার আগের আয়াত টি বললে। তাহলে আপনার ভুল ধারণা এখনই ভেঙে যাবে। তা হলো " (১৯০ :২)এবং যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে ,তোমরাও আল্লাহের পথে যুদ্ধ করো এবং সীমা অতিক্রম করো না।নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের ভালোবাসেন না। (১৯১:২) তাদেরকে যেখানেই পাও হত্যা করো এবং তারা তোমাদেরকে যেখান থেকে বহিষ্কৃত করেছে ,তোমরাও তাদেরকে সেখান থেকে বহিষ্কৃত করো। এবং হত্যা অপেক্ষা অশান্তি গুরুতর এবং মসজিদুল হারামের নিকট তোমরা তাদের (নন-মুসলিম) সাথে যুদ্ধ করিবে না যে পর্যন্ত না তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে। কিন্তু যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে ,তোমরা তাদেরকে হত্যা করো। অবিশ্বাসীদের জন্য এটাই প্রতিফল। (১৯২:২) অতৎপর তারা যদি বিরত হয় তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুনাময়। (১৯৩:২)তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে থাকবে যতক্ষণ না অশান্তি দূর হয় এবং আল্লাহের দীন প্রতিষ্ঠিত না হয়। যদি তারা (ননমুসলিম )বিরত হয় তাহলে জালিমদের ব্যতীত আর কাউকেও আক্রমণ করা চলবে না। (১৯৪:২) পবিত্র মাস পবিত্র মাসের বিনিময়ে। যাহার পবিত্রতা অলঙ্ঘনীয় তাহার অবমাননা সকলের জন্য সমান। *সুতরাং যে কেও তোমাদের আক্রমণ করবে, তোমরাও তাহাকে অনুরূপ আক্রমণ করবে। " -সূরা বাকারা (১৯০-১৯১)
এই আয়াতগুলোর কারণে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথেই যুদ্ধ করতেন যারা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করতো। যদি কেও অশান্তি সৃষ্টি না করে অথবা তাদের সাথে যদি কেও যুদ্ধে লিপ্ত না হয় তাহলে তিনি যুদ্ধ করতেন না। অতৎপর বলা হচ্ছে যে আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের ভালোবাসেন না। এই আয়াত এর বেপারে মুসনাদে আহমেদ এ হাদিসে বলা হয়েছে যে , " তোমরা আল্লাহের নাম বেরিয়ে যাও,তোমরা বাড়াবাড়ি করো না ,প্রতারণা করো না ,শত্রুদের দেহের অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলো কেটো না ,দরবেশদের কে হত্যা করো না। " এমনকি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার ভাবে ঘোষণা করে দেন যে , "যে বেক্তি তার দরজা বন্ধ করে দেবে সে নিরাপদ ,যে মসজিদ এ চলে যাবে সেও নিরাপদ ,যে আবু সুফিয়ান এর ঘরে আশ্রয় নেবে সেও নিরাপদ। "
এখন আসি দ্বিতীয় আয়াতে যা প্রথমেই বলেছিলাম তা হলো " মুশরিকদের (যারা মুসলিম নন) যেখানেই পাও হত্যা করো " -সূরা তাওবা : ৫ নং আয়াত। এই আয়াত পড়লে আপাতত দৃষ্টিতে আপনার মনে হবে যে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এই আয়াত সম্পর্কে নওমুসলিমদের ভুল ধারণা রয়েছে,এই আয়াত সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু ধারণা পেতে হলে তার কয়েকটি আয়াতের পরের আয়াত আপনাকে দেখতে হবে তা হলো " তোমরা সমবেত ভাবে মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করো যেমন তোমাদের সাথে তারা সমবেতভাবে যুদ্ধ করে "-সূরা তাওবা : ৩৬।
আরেকটি আয়াত আপনাদেরকে বলি তাহলে আরো পরিষ্কার বুঝতে পারবেন তা হলো "যদি তোমরা শাস্তি প্রদান করো তাহলে সেই পরিমান শাস্তি প্রদান করো যেই পরিমান শাস্তি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছে।"(১৬:১২৬)
তাফসীর ইবনে কাসির এ উল্লেখ রয়েছে যে , হজরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রাঃ বলেন ,রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমরা এর উপর আমল করেছি ,তখন ইসলাম দুর্বল ছিল ,মুসলিমরা সংখ্যায় অল্প ছিল ,যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতো তার উপর অশান্তি এসে পড়তো ,তাকে হয় হত্যা করা হতো অথবা কঠিন শাস্তি দেওয়া হতো। অবশেষে এই ধর্ম বিস্তার লাভ করেছে ও অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অশান্তিও দূরীভূত হয়েছে। "
যারা ইসলাম সম্বন্ধে বাজে ধারণা দিচ্ছে ইসলাম থেকে সরে আসার জন্য,তারা নিজেও ইসলাম বুঝে না ,অন্যকেও ইসলাম সম্পর্কে দূরে রাখার জন্য আংশিক আয়াত ব্যবহার করছে। তবে তার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হলো আমাদের মিডিয়া। আমরা কোনো কিছু যাচাই বাছাই না করেই মিডিয়াকে বিশ্বাস করে ফেলি।
যারা ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন উপস্থাপন করেন এবং ইসলামকে বিশুদ্ধভাবে জানতে চান তাদের জন্য আমাদের এই উপহার ।
Visitors
Sunday, 25 August 2019
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
তথ্য সত্য মুক্তি প্রগতি
তথ্য সত্য মুক্তি প্রগতি কুরআনে বিস্ময়!যে বিস্ময় ভাবনাতে ও আসেনা। ★ আজ দেখব,সূরা আসহাবে কাহফ হতে, সূরা,আয়াত,ঘটনা বর্ণনা,বর্ণিত শব্দের...
-
Mercy Killing লেখকঃ তানভীর আহমেদ মস্তিষ্কের নিচে গলার পিছন দিকটায় থাকে Spinal Cord যা বাংলায় সুষুম্না কান্ড হিসেবে পরিচিত। আর পুরো শরীরে...
-
কুরআন কি মানুষের পক্ষে লেখা সম্ভব ? মানুষের যে জিনিসটি আল্লাহ নিজের জন্য সৃষ্টি করেছেন ।” €€ ***************************************...
-
নক্ষত্রটির নাম Sirius। বাংলায় লুব্ধক তারা। রাতের আকাশে এই তারাটাকে দেখতে সবচেয়ে উজ্জ্বল দেখায়! খালি চোখে দেখা না গেলেও এটা মূলত দুইটা তারার ...

No comments:
Post a Comment
Note: only a member of this blog may post a comment.