প্রশ্নঃ তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে [সুরা তওবা ৯:২৯]
এই আয়াতে কী সকল ইহুদী,খৃষ্টানদের সাথে যুদ্ধ করে জিজিয়া আদায় করতে বলা হচ্ছে?? এবং জিজিয়া কী ও কেন?
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
জবাবঃ
ইসলাম হল আল্লাহর(স্রষ্টার) মনোনীত সত্য ধর্ম। এবং ক্বুরআন-হাদিস হল এর ধারক-বাহক;
ক্বুরআনের ব্যাখ্যা করা, অনেক জ্ঞানি মানুষের কাজ। বিশেষ করে যেগুলো 'আইন' হিসেবে হুকুমত এসেছে সেগুলো অনেক বাছবিচার, প্রেক্ষাপট; -'তার সাথে সম্পৃক্ত আরো অন্যান্য আয়াত, সব দিক সার্বিক বিবেচনা করে তারপর সেটা আইনের রুপদান করা হয়।
কিন্তু কিছু মূর্খবিশেষ 'অজ্ঞ ইসলাম বিদ্বেষী' আছে, যারা ক্বুরআনের একটা 'খন্ড- আয়াত' দেখিয়ে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্তে ফেলার অপচেষ্টা করে থাকে।
- তেমন'ই একটা আয়াত হল এই। ইসলামবিদ্বেষী-গন, প্রায় এই আয়াত দেখিয়ে বিভ্রান্তিকর অভিযোগ করে-
"তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে"। [তাওবা -০৯:২৯]
-তারা উক্ত দেখিয়ে মিথ্যাচার করে:
*উক্ত আয়াত- ইহুদি, খৃষ্টান মাত্রই, তাদেরকে হত্যা করতে বলেছে।
*পূর্বে বল প্রয়োগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করনো হয়েছিল এবং এখনো তা হুকুম করে।
* নবী (সা) জিযিয়ার নেওয়ার লোভে যুদ্ধ করেছে।
মূলত ক্বুরআন হল মানবজীবনের সংবিধান সম্বলিত এক ঐশী গ্রন্হ। মানবজীবনে প্রীতি, সুখ, ন্যায়বিচার, শান্তিময়'সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। এবং স্রষ্টা নিজেকে পরিচয়দান করার লক্ষ্যে, তার দূতের(নবী) মাধ্যমে আমাদের মাঝে কিতাব নাজিল করেছেন।
এই কিতাবের আয়াত খন্ডে খন্ডে, প্রেক্ষাপট, অবস্হান, ইতিহাস, ভবিষ্যৎবার্তা, হুকুম, বিজ্ঞান, অলৌকিক। আকারে ক্রমে ক্রমে নাজিল হয়ে একটি 'পূর্নাংগ কুরআনের' রুপ পেয়েছে। এর শব্দ ছোট, কিন্তু ব্যাখ্যা বহুমূখি, এবং দীর্ঘ। ক্বুরআনের ব্যাখ্যা করা অনেক জ্ঞানি মানুষের কাজ। বিশেষ করে যেগুলো আইন, হুকুম, হিসেবে এসেছে, সেগুলো অনেক বাছবিচার প্রেক্ষাপট, তার সাথে সম্পৃক্ত আরো অন্যান্য আয়াত; সব দিক থেকে সার্বিক বিবেচনা করে তারপর সেটা ফায়সালা, আইনের রুপদান করা হয়।
আসুন দেখি উক্ত আয়াতের প্রকৃত ব্যাখ্যা কী।
আয়াত নাজিলের পটভূমিঃ
উক্ত আয়াত সহ আরো কিছু আয়াত, ৯ হিজরীর রজব মাসে বা তার কিছু আগে 'তাবুকের' যুদ্ধের প্রাক্কালে একটি বিশেষ অবস্হার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছিল। সে সময় নবী (সা) তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এখানে মূলত যুদ্ধের সময়কার আল্লহার তরফ থেকে, নিয়ম-নিতী মালা প্রদান করা হয়েছিল।
মূলত এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল হোদাইবিয়ার সন্ধির পর। নবী (সা) ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণের উদ্দেশে একটি দল সিরিয়া সীমান্তের লাগোয়া গোত্রগুলোর মধ্য গিয়েছিল। তাদের বেশীর ভাগ ছিল খৃষ্টান এবং রোম সাম্রাজ্যের প্রভাবাধীন। এর পর তারা ১৫ জন মুসলমানকে হত্যা করে।
একই সময়ে নবী (সা) বুসরার গভর্ণর শুরাহবিল ইবনে আমরের নামেও দাওয়াত নামা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা তাকেও হত্যা করে। এ সরদারও সরাসরি রোমের কাইসারের হুকুমের আনুগত ছিল।
এসব কারনের সূত্র ধরে-ই, একপর্যায় যুদ্ধ বেধে যায় যা, 'মুতা' যুদ্ধ নামে পরিরিচিত। সেই যুদ্ধে খৃষ্টানদের বিশাল বাহিনীকে, মুসলমানদের অল্পসংখ্যক সৈনিক অলৌকিকভাবে প্রতিহত করে।
তারপরের বছর রোমের শাসক অন্যান্য গত্রদের সাথে আতাত গড়ে, মুসলিমদের-কে সমূলে নিঃশেষ করার পরিকল্পনা গ্রহন করে। তখন খবর পেয়ে নবী (সা) পাল্টা যুদ্ধ (প্রতিহত) করার ঘোষনা দিয়ে দেন।
--এই ছিল উক্ত আয়াতের পটভূমি। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সুরা তাওবার ওই রুকুর আয়াত গুলো নাজিল হয়। যেহেতু এটা যুদ্ধ সময়কার আয়াত তাই 'যুদ্ধ' বিষয়ক ইতিহাস থাকাটাই সাভাবিক।
[ নবী (সা) যে সত্য নবী ততকালিন ইহুদি, খৃষ্টান জানত, কারনন তওরাত,জবুরে তার আগমনি বার্তা আছে তারপরও তারা বিদ্বেষীতা পোষণ করত ]
----------------------------
জিজিয়া করঃ
জিজিয়া কি? 'জিজিয়া' হল সরকারের পক্ষ হতে আদায়কৃত ভ্যাট, ট্যাক্স, কর। জিজিয়ার শব্দগত অর্থ হল-' সামরিক কর্তব্য থেকে অব্যাহতিজনিত কর'। কারন শরীয়াহ রাস্ট্রে কোন শত্রুর আক্রমন/যুদ্ধ হলে, সকল মুসলিমদের তা প্রতিহগ করা অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু বিধর্মিদের জন্য তা অবশ্যকিয় নয়, আর তারা তাতে অংশগ্রহণ'ও করত না উল্টো তারা সুজোগে থাকত যুদ্ধ বাধলেই শত্রুদের সাথে আতাত গড়ত। তাই এই যুদ্ধে সৈনিক না হওয়াতে অবহ্যতি হিসেবে "জিজিয়া করর" আদায় করত। এই কর দেওয়ার ফলে তারাও সেই সুজোগ-সুবিধা পেত যা মুসলিমরা পেত। জিজিয়া কর থেকে নারী,শিশু, বৃদ্ধ, এবং ভিক্ষুকদের অব্যহতি দেওয়া হতো। এই কর ছিল শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীতে যোগদান সক্ষম এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল পুরুষদের জন্য।
- মুসলমানদের উপরও এক ধরনের বাধ্যতামূলক কর ছিল যা, 'যাকাত' নামে পড়িচিত। উল্লেখ থাকে এই 'কর' নেওয়ার ক্ষেত্রে অমুসলিমদের বাড়তি সুজোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল;
যেমন যাকাত নারী-পুরুষ, শিশু, সর্ব পর্যায় লোকদের নিকট হতে গ্রহন করা হয়, কিন্তু 'জিজিয়া' এরুপ নয়। ।শুধু তাই নয় মুসলিমদের ফেতরা, ফসলের ওশর, সদ্বকাহ ইত্যাদি দিতে হতত, যা তাদের দিতে হতোনা।
তাছারা জিজিয়া ছিল খুবই সামান্য একটা কর।
আরেকটি বিষয় হল,
যুদ্ধ শেষে যারা পরাজিত হয়, তারা শত্রু হিসেবেই পড়িচিত পায়।
কারন-' ইতিপূর্বে তারা অন্যায় ভাবে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে'।
তাই রাস্ট্রের জনগন তাদের বিষয়ে শত্রুতায়'ই পুষবে, এটাই মানুষ্ব-মনের সাভাবিক পক্রিয়া। তারাউপর তারা যদি আবার সে দেশেই তাদের সাথেই থাকে, তখন বিষয়টা আরো জটিল,ভয়ানক। এমতাবস্থায় জনগের চাপা ক্ষোবে, তারা বিপদে পরতে পারে; বিধায়, এজন্য, অবস্হা, পরিস্হিতিতে শৃংখলা বজায় রাখতে 'পরাজিতদের' জীবন রক্ষার্থে নাম মাত্র 'জিজিয়ার' মাধ্যমে তাদের-কে, সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদান করা হত।
শেষকথাঃ
-মূলত 'জিজিয়া কর' সাধারন রাস্ট্রনিতীর অন্তরভূক্ত। সকল দেশেই ভ্যাট,ট্যাক্স, কর আদায় করা অবশ্যম্ভাবী। যদি কেহো তা, আদায় না করে; তাহলে তার বিরদ্ধে সরকারী ভাবে শাস্তির ব্যাবস্হা করা হয়। এসব নিয়ম-কানুন, অপরাধ; অত্যাচার নয়, বরং একটি রাস্ট্রচালিকার সু-কার্যকরি নিয়ম, নিতীমালা।
ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে, আরবে কোন সু-সংগঠিত রাস্ট্রব্যাবস্হা ছিলনা। তারা ছিল বিচ্ছিন্ন। ফলে প্রতিটা গত্রে যুদ্ধ, অন্যায়, অত্যাচার, জুুলুম নিত্যাসংগি ছিল। পূর্ব থেকে চলে আশা এসব বিপর্যয় অবস্হাকে, সু-সংঘবদ্ধ করে একটি রাস্টব্যাবস্হার মাধ্যমে আয়ত্তে এনে, শান্তিময় একটি রাস্ট্র ব্যবস্হা বাস্তবায়ন করেছিলেন মানবতার দূত নবী (সা); যা ইতিহাসবিদৃত। রাস্ট্র কায়েমের পর যে যার মত ধর্ম পালন করত কাওকে বাধা প্রদান করা হত না। এবং কাউকেই বলপ্রয়োগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা হয়নি। যার জলন্ত প্রমাণ সৌদীতে আজও প্রচুর অমুসলিম বসবাস করছে
কুরআনে নির্দেশ এসেছেঃ
"ধর্ম মানতে কোনো ধরনের জোর জবরদস্তি নেই। সঠিক পথ ভুল পথ থেকে পরিষ্কারভাবে আলাদা হয়ে গেছে"। (বাকারা: ২৫৬)
যারা ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন উপস্থাপন করেন এবং ইসলামকে বিশুদ্ধভাবে জানতে চান তাদের জন্য আমাদের এই উপহার ।
Visitors
Sunday, 25 August 2019
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
তথ্য সত্য মুক্তি প্রগতি
তথ্য সত্য মুক্তি প্রগতি কুরআনে বিস্ময়!যে বিস্ময় ভাবনাতে ও আসেনা। ★ আজ দেখব,সূরা আসহাবে কাহফ হতে, সূরা,আয়াত,ঘটনা বর্ণনা,বর্ণিত শব্দের...
-
Mercy Killing লেখকঃ তানভীর আহমেদ মস্তিষ্কের নিচে গলার পিছন দিকটায় থাকে Spinal Cord যা বাংলায় সুষুম্না কান্ড হিসেবে পরিচিত। আর পুরো শরীরে...
-
কুরআন কি মানুষের পক্ষে লেখা সম্ভব ? মানুষের যে জিনিসটি আল্লাহ নিজের জন্য সৃষ্টি করেছেন ।” €€ ***************************************...
-
নক্ষত্রটির নাম Sirius। বাংলায় লুব্ধক তারা। রাতের আকাশে এই তারাটাকে দেখতে সবচেয়ে উজ্জ্বল দেখায়! খালি চোখে দেখা না গেলেও এটা মূলত দুইটা তারার ...

No comments:
Post a Comment
Note: only a member of this blog may post a comment.