Visitors

Sunday, 25 August 2019

সত্যিই কোনো পরম দয়ালু সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর থাকত, তাহলে এরকম ফুড ওয়েব থাকত না ?

নাস্তিকের প্রশ্ন ও জবাবঃ
************************
প্রশ্নঃ-

যদি সত্যিই কোনো পরম দয়ালু সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর থাকত, তাহলে এরকম ফুড ওয়েব থাকত না। একজনের ক্ষুধা মেটানোর জন্য অন্যজনকে মারতে হয়। বাঘের থাবায় মা হরিণ মরছে, হরিণীর বাচ্চাগুলো না খেতে পেয়ে মরে যাচ্ছে। আবার হরিণ না মারতে পারলে বাঘিনী নিজের বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারছে না। ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার থাকলে এরকম নৃশংস ফুড ওয়েব হত না, যেখানে কাউকে বাঁচার জন্য অন্যকে খুন করতে হয়।

জবাবঃ
*******
সমগ্র সৃষ্ট বস্তু ও প্রকৃতি জগত হলো আল্লাহ্‌র অসীম জ্ঞানের সুস্পষ্ট এবং শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। বস্তুর পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্যেই আল্লাহ্‌র এবং তাঁর ক্বোদরাত, হিকমাত ও অন্যান্য সুমহান গুণাবলির পরিচয় লাভ করা খুবই সহজ। তাঁর অনন্ত-অশেষ দয়া, মায়া ও রাহমাত সমগ্র জগতের সকল কিছুকে জীবন ও অস্তিত্ব দান করছে।
মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু ও অণু-পরমাণু মহাজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন’র মহা প্রজ্ঞা ও মহান বুদ্ধিবৃত্তির ক্রিয়াশীলতার সাক্ষ্য বহন করে চলছে। বিচিত্র, বিশাল, নিপুণ, নিখুঁত, বর্ণাঢ্য ও অপরূপ এই সৃষ্টিজগতের শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার পরতে পরতে রয়েছে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র মহাশক্তির বাস্তব প্রমাণ ও নিদর্শন।

এই সৃষ্টি জগতের বিচিত্র সমস্ত প্রাণী ক্ষুদ্র এমিবা থেকে বিশাল হাতি,মানুষ সবার রিযিক আল্লাহ তাআলা দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :

{وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ}

‘ আর যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। সব কিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে’ (সূরা হূদ : ৬)।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
অতপর মানুষ তার খাদ্যকেই একটু লক্ষ্য করুক। আমি উপর থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। তারপর ভূমিকে বিস্ময়করভাবে বিদীর্ণ করেছি। তারপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সব্জি, যায়তুন, খেজুর, নিবিড় ঘন বাগান, ফলমূল ও ঘাসপাতা। -সূরা আবাসা : ২৪-৩২

প্রথম আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন তিনি সকল জীবের খাদ্যদেন আর দ্বিতীয় আয়াতে তিনি মানুষকে তার নির্দেশ দিয়েছেন তার খাদ্য নিয়ে গবেষণা করতে।কিভাবে তা আসে, কিভাবে উৎপাদিত হয় ইত্যাদি খেয়াল করতে।

যদি আমরা গভীরভাবে লক্ষ করি তবে দেখি -
জীব ও অজীব উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত বিনিড়। সব প্রাণী খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। কারণ প্রাণীদেহে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে না কিন্তু উদ্ভিদে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। তাই উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে কিন্তু প্রাণী নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। তাই প্রাণী খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া বস্তু বাসস্থান, আশ্রয় ইত্যাদির জন্যও প্রাণী উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল।
পরিবেশের অজীব এবং জীব উপাদানসমূহের মধ্যে পারষ্পরিক ক্রিয়া, আদান-প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবেশে যে তন্ত্র গড়ে ওঠে তাই খাদ্যশৃঙ্খল নামে পরিচিত।
পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাবে বাস্তুতন্ত্রের সকল উপাদানের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলছে।

খাদ্যশৃঙ্খলকে কার্যকরী রাখার জন্য এ সকল জীব যে ধরনের ভূমিকা রাখে তার উপর ভিত্তি করে এসব জীব উপাদানকে (ক) উৎপাদক, (খ) খাদক এবং (গ) বিয়োজক এ তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

(ক) উৎপাদক : সবুজ উদ্ভিদ যারা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে তারা উৎপাদক নামে পরিচিত। যারা উৎপাদক তারা সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে সালোকসংস্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। যার উপর বাস্তুতন্ত্রের অন্যান্য সকল প্রাণী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল।
(খ) খাদক বা ভক্ষক : যে সকল প্রাণী উদ্ভিদ থেকে পাওয়া জৈব পদার্থ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে বা অন্য কোনো প্রাণী খেয়ে জীবন ধারণ করে তারাই খাদক বা ভক্ষক নামে পরিচিত। খাদ্যশৃঙ্খল তিন ধরনের খাদক রয়েছে।

প্রথম স্থরের খাদক :
যে সকল প্রাণী উদ্ভিদভোজী তারা প্রথম স্থরের খাদক। এরা তৃণভোজী নামেও পরিচিত। তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে ছোট কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে অনেক বড় প্রাণী। যেমন- গরু, ছাগল ইত্যাদি।

দ্বিতীয় স্থরের খাদক :
যারা প্রথম স্থরের খাদকদেরকে খেয়ে বাঁচে। যেমন- পাখি, ব্যাঙ, মানুষ ইত্যাদি। এরা মাংসাশী বলেও পরিচিত।

তৃতীয় স্থরের খাদক বা সর্বোচ্চ খাদক :
যারা দ্বিতীয় স্তরের খাদকদের খায়। যেমন- কচ্ছপ, বক, ব্যাঙ, মানুষ ইত্যাদি। এদের মধ্যে কোনো কোনো প্রাণী আবার একাধিক স্তরের খাবার খায়। এদেরকে বলা হয় সর্বভুক। আমরা যখন ডাল, ভাত, আলু ইত্যাদি খাই, তখন আমরা প্রথম স্তরের খাদক। আবার আমরা যখন মাছ, মাংস খাই, তখন আমরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের খাদক।

বিয়োজক :
এরা পচনকারী নামেও পরিচিত। পরিবেশে কিছু অণুজীব আছে, বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক যারা মৃত উদ্ভিদ ও মৃত প্রাণীর দেহের উপর ক্রিয়া করে। এসময় মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। ফলে মৃতদেহ ক্রমশ বিয়োজিত হয়ে নানা রকম জৈব ও অজৈব দ্রব্যাদিতে রূপান্তরিত হয়। এসব দ্রব্যের কিছুটা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক নিজেদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। মৃতদেহ থেকে তৈরি বাকি খাদ্য পরিবেশের মাটি ও বায়ুতে জমা হয়। যা উদ্ভিদ পুনরায় ব্যবহার করে। এভাবে প্রকৃতিতে অজীব ও জীব উপাদানের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হয়ে বাস্তুসংস্থান সচল থাকে।

খাদ্যশৃঙ্খলের শক্তি প্রবাহঃ-
**************************
সবুজ উদ্ভিদের মাধ্যমেই সূর্যশক্তি থেকে সৃষ্ট রাসায়নিক শক্তি বিভিন্ন প্রাণীতে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়। উৎপাদক থেকে আরম্ভ করে সর্বোচ্চ খাদক পর্যন্ত শক্তি রূপান্তরের সময় প্রতিটি ধাপে শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে উৎপাদক থেকে শক্তি যায় তৃণভোজী প্রাণীর দেহে। সেখান থেকে দ্বিতীয় স্তরের খাদক এবং দ্বিতীয় স্তরের খাদক থেকে যায় সর্বোচ্চ খাদকে। এভাবেই শক্তি প্রবাহ চলতে থাকে। প্রতি স্তরে শক্তি হ্রাস পেলেও বিযোজক যখন বিভিন্ন মৃত জীবে বর্জ্য পদার্থে বিক্রিয়া ঘটায় তখন অজৈব পুষ্টিদ্রব্য পরিবেশে মুক্ত হয়ে পুষ্টিভান্ডারে জমা হয়। যা আবার সবুজ উদ্ভিদ কাজে লাগায়। এ থেকে বুঝতে পারা যায় যে বাস্তুসংস্থানে পুষ্টিদ্রব্য চক্রাকারে প্রবাহিত হয় এবং শক্তিপ্রবাহ একমুখী।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় খাদ্যশৃঙ্খলের ভূমিকাঃ
*************************************************
পরিবেশে বাস্তুতন্ত্র একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ একক। যে কোনো পরিবেশে বাস্তুতন্ত্র মোটামুটিভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত। প্রকৃতিতে যে কোনো জীবের সংখ্যা হঠাৎ করে বেশি বাড়তে পারে না। প্রতিটি জীব একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে এরা পরস্পর পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সহজে এর কোনো একটি অংশ একেবারে শেষ হতে পারে না।
কোনো একটি পরিবেশে বিভিন্ন স্তরের জীব সম্প্রদায়ের সংখ্যার অনুপাত মোটামুটিভাবে অপরিবর্তিত থাকে। পরিবেশে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটলেও বহু দিন পর্যন্ত প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে। একটি উদাহরণের সাহায্যে আমরা এ বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করি।
মনে করেন, যে কোনো একটি বনে বাঘ, হরিণ, শূকর ইত্যাদি বাস করে। এ বনে বাঘের খাদ্য হলো হরিণ ও শূকর। হরিণ ও শূকরের সংখ্যা বেড়ে গেলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। কারণ বাঘ প্রচুর খাদ্য পাবে। আবার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে হরিণ ও শূকরের সংখ্যা কমে যাবে। হরিণ ও শূকরের সংখ্যা কমে গেলে বাঘের খাদ্যাভাব দেখা দিবে। ফলে বাঘের সংখ্যাও কমে যাবে। আবার বাঘের সংখ্যা যদি কমে যায় তবে হরিণ ও শূকরের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এভাবে হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে একটি এলাকার খাদ্যশৃংখলের ভারসাম্য প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।

কিন্তু যদি সকল জীব শুধুমাত্র একটি খাদ্যের উপর নির্ভরশীল হত,যেমন সবাই যদি শুধুমাত্র উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল হত তবে উদ্ভিদ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেত এতে খাদ্যাভাব দেখা দিত আর সকল প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটত।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যদি একটি জংগলের সকল প্রানী শুধু ঘাস খেত তবে একসময় সকল ঘাস শেষ হয়েযেত আর জংগলের সকল প্রাণী ঘাসের অভাবে মারা যেত।
সুতরাং আমরা দেখতে পাই জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য খাদ্যশৃংখল অত্যাবশ্যক।
খাদ্য শৃঙ্খল ছাড়া বিচিত্র এই জীব জগতের টিকে থাকা অসম্ভব।জীব জগতের অস্তিত্বের জন্য এটা এক অসাধারণ কৌশল। এই কৌশল শুধুমাত্র এক মহান কৌশুলীর দ্বারাই প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব।যিনি অতি সুক্ষ পরিকল্পনায় তার সৃষ্ট ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া থেকে মানুষ পর্যন্ত একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছেন।
আফসোস যদি নাস্তিকরা এটা নিয়ে ভাবত তবে তাদের সকল অবিশ্বাস দূর হয়ে যেত বলেই মনেকরি।

আল্লাহ্‌ সবাইকে তার সৃষ্টি রহস্য বুঝার তৌফিক দান করুন,আমিন।


No comments:

Post a Comment

Note: only a member of this blog may post a comment.

তথ্য সত্য মুক্তি প্রগতি

তথ্য সত্য মুক্তি প্রগতি কুরআনে বিস্ময়!যে বিস্ময় ভাবনাতে ও আসেনা। ★ আজ দেখব,সূরা আসহাবে কাহফ হতে, সূরা,আয়াত,ঘটনা বর্ণনা,বর্ণিত শব্দের...